‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের মাথার উপরে ছাতার মতো হয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি নারীদের এগিয়ে নিতে সবসময় বিভিন্ন যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সমাজে নারীদের বর্তমান অবস্থার দিকে লক্ষ্য করলে আমরা সহজেই তা অনুভব করতে পারি। আসলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন নারীবান্ধব প্রধানমন্ত্রী।’ মঙ্গলবার (৮ মার্চ) দুপুরে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আদিবা আনজুম মিতা প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে এসব কথা বলেন। ‘টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য’- প্রতিপাদ্য নিয়ে জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর রাজশাহীর যৌথ উদ্যোগে সারাবিশে^র মতো রাজশাহীতেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদ্যাপন করা হয়।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবদুল জলিলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, সমাজসেবী শাহীন আকতার রেনী, জাতীয় মহিলা সংস্থা রাজশাহীর চেয়ারম্যান বেগম মর্জিনা পারভীন। সভায় বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী, মুজিব শতবর্ষসহ টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জেন্ডার সমতার ভূমিকা তুলে ধরে বক্তব্য দেন।
সভায় আদিবা আনজুম মিতা বলেন, নারীরা যেন পিছিয়ে না থাকে, তাদের যাতে ক্ষমতায়ন হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী নারীদের বিভিন্ন ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। নারীদের বয়ষ্কভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। ফলে এসব সহায়তা পেয়ে নারীরাও এখন সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন নারীরাও কর্মক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে। যে যেখানে কাজ করছে, সেখানেই প্রতিভার প্রমাণ দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এখন পুরুষের তুলনায় কোনো ক্ষেত্রেই নারীরা পিছিয়ে নেই। বর্তমানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী। নারীরা সচিব, জেলা প্রশাসক, ম্যাজিস্ট্রেট হচ্ছেন। সমাজে বিভিন্ন পেশায় নারীরা দক্ষতার সঙ্গে অবদান রেখে যাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে শাহীন আকতার রেনী বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক অংশকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই তিনি নারী উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তাঁর সুদূর প্রসারী পদক্ষেপের কারণেই বাংলাদেশে নারীদের ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে আমরা সারাবিশে^ সপ্তম। আমাদের শিল্পায়নে ৪৪ শতাংশ অবদানই নারীর। একসময় সশস্ত্রবাহিনিতে নারীদের অংশগ্রহণ চিন্তাও করা যেত না; কিন্তু, এখন সেটা সম্ভব হয়েছে। আলোচনা সভায় বক্তারা নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহসহ নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য নিরসনে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
আলোচনা সভা শেষে ৫ জন সফল নারী উদ্যোক্তাকে সম্মাননা প্রদান করা হয় এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি) এনজিও’র মাধ্যমে ৮টি কিশোর-কিশোরী ক্লাবের পেয়ার লিডারদের হাতে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা বই উপহার হিসাবে তুলে দেয়া হয়।
এদিকে, নারীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), রাজশাহী’র সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২২ উদযাপন কমিটির উদ্যোগে র্যালি, মানববন্ধন ও পথসভা করেছেন। র্যালিটি নগরীর আলুপট্টি মোড় থেকে শুরু হয়ে সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে পথসভার মাধ্যমে শেষ হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক কল্পনা রায়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) মো: সুজায়েত ইসলাম। এ কর্মসূচীতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টা, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, পরিবর্তন, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস নেটওয়ার্ক, পার্টনার, এডাব, ওয়েব, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, অনগ্রসর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, নিষ্কৃতি ফাউন্ডেশন, তৃণমূল, সনাক, রুলফাও, দিনের আলো হিজড়া সংঘ এবং রাজশাহী মানবাধিকার জোট অংশগ্রহণ করেন বলে নিশ্চিত করেছেন ট্্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), রাজশাহীর এরিয়া কোঅর্ডিনেটর-সিভিক এনগেজমেন্ট মো. মনিরুল হক।
এছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিভিন্ন সংগঠন নিজ নিজ কর্মসূচির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করেছে। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় বর্ণাঢ্য র্যালির মাধ্যমে তারা রাবি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। র্যালিতে বিভিন্ন বিভাগের নারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় বলে মঙ্গলবার বিকেলে নিশ্চিত করেছেন রাবি জনংসযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রফেসর প্রদীপ কুমার পা-ে।