গত কয়েকমাস ধরে ধারাবাহিকভাবে বরিশালের বাজারে বেড়েছে অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম। খুচরা বাজারে চলতি সপ্তাহে আরেক দফা বৃদ্ধি পেয়েছে খোলা সয়াবিন তেল, মসুরডালসহ প্রায় সবধরনের চালের দাম।
জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নগরীসহ জেলার প্রতিটি উপজেলার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের নিয়ে জরুরী বৈঠক করে কঠোর নির্দেশ দেয়া সত্বেও অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম থামানো যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারে প্রায় অধিকাংশ পন্যের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে নিন্ম ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে এখনই চরম হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দরিদ্র নিন্মবিত্তদের জন্য চালু করা ওএমএস’র ডিলারদের দোকানের সামনে প্রতিদিন দরিদ্রদের সাথে মধ্যবিত্ত পরিবারের নারী সদস্যরা লাইনে দাঁড়িয়ে পন্য নিচ্ছেন। তবে তারা সবাই বোরখার আড়ালে পর্দায় মুখ ঢেকে লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের কাঙ্খিত মালামাল নিচ্ছেন। প্রতিদিন মধ্যবিত্তদের সারি দীর্ঘ হচ্ছে।
নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি ও খুচরা বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট এখনো কাটেনি। বেশ কিছুদিন ধরে বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো চাহিদামতো সরবরাহ না করায় সয়াবিন তেলের এ সংকট কাটছে না বলে জানিয়েছেন, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা।
গত ৯ মার্চ কয়েকটি সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি সবজির দাম আগের মতোই চড়া। মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৫০ টাকা, টমেটো ৩৫ টাকা, ধনেপাতা ৬০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, করল্লা ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, চিচিঙা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি পিস বাঁধাকপি ৩০ টাকা, ফুল কপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং বিভিন্ন ধরনের শাকের আঁটি ৩০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সূত্রমতে, গত সপ্তাহের তুলনায় আলু, আদা, পেঁয়াজ, রসুন, আটা-ময়দা ও চিনির দামে কোনো হেরফের নেই। খুচরা বাজারে এখন প্রতি কেজি আলু ১৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকা, দেশি আদা ৭০ টাকা, চায়না আদা ১২০ টাকা, দেশি রসুন ৬০ টাকা, চায়না রসুন ১২০ টাকা, খোলা চিনি প্রতি কেজি ৮০ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ৮৫ টাকা, প্যাকেট আটা ৪৫ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ৫৫ টাকা দরে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
ছোট দানার মসুর ডালের দাম না বাড়লেও বড় দানার মসুর ডাল কেজি প্রতি পাঁচ টাকা বেড়েছে। ছোট দানার মসুর ডাল ১২০ টাকা ও বড় দানার মসুর ডাল প্রতিকেজি ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন ১৯০ টাকা এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৮ থেকে ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সরু, মোটা ও মাঝারিসহ প্রায় সবধরনের চালের দাম কেজি প্রতি দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। সরু মিনিকেট চাল মানভেদে ৬২ থেকে ৬৫ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা এবং নাজিরশাইল চাল ৭০ থেকে ৭৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অপরদিকে বাজারে ফার্মের মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সোনালি মুরগির কেজি ২৭০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকা এবং লেয়ার মুরগি ২৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের ডিমের দাম প্রতি হালি (চার পিস) ৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬০০ এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে আট থেকে ৮৫০ টাকায়।
বাজারে আগের মতোই মাছের দাম চড়া। আকারভেদে চাষের শিং মাছ প্রতি কেজি ছয় থেকে ৬৫০ টাকা, রুই তিন থেকে ৩৫০ টাকা, চাষের পাঙ্গাশ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, কাতল চারশ’ থেকে ৬০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৫০ টাকা, সাগরের ঢেলা ৩৬০ টাকা, আকারভেদে আইড় মাছ নয় থেকে এক হাজার টাকা, দেশি চিংড়ি (ছোট) আটশ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর চৌমাথা বাজারে কেনাকাটা করতে আসা এম মিরাজ হোসাইন বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের দামে আগুন লেগেছে। চাল, তেল, ডালসহ নিত্যপণ্যের মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার মতো নিন্ম আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পরেছেন। সংসারের খরচ চালানোর কুলকিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না।
নগরীর বাংলা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী তোতা স্টোরের মালিক জহিরুল ইসলাম বলেন, পাইকারি পর্যায়েই চাল ও ছোট দানার মসুর ডালের দাম বেড়েছে। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে এসব পণ্যের দামও বেড়েছে। খোলা সয়াবিন তেলের দামও ঊর্ধ্বমুখী। এ ছাড়া খুচরা বাজারে এখনো সয়াবিন তেলের সংকট রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো চাহিদামতো তেল সরবরাহ করছে না। অনেক অনুরোধের পর ২/১ কার্টুন তেল পাওয়া যাচ্ছে। তার সাথে শর্তজুড়ে অন্য পণ্যও বিক্রি করতে দিচ্ছেন কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা।