অত্যাধুনিকতার এই যুগেও রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার আদিবাসী সম্প্রদায় সরকারি বিধি উপেক্ষা করে নিয়মিত বন্যপ্রাণী শিকার করছে। প্রতিদিন প্রত্যুষে সংঘবদ্ধ হয়ে বের হয় এরা। ১৫ থেকে ২০ জন সংঘবদ্ধ এক একটি দল তীর-ধনুক,লাঠি,শাবল,বল্লম নিয়ে শিকারের সন্ধানে বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। শিকারের সন্ধান পেলেই কৌশলগত অবস্থান নিয়ে শিকারের পিছনে ছুটতে ছুটতে একসময় শিকারকে ধরে ফেলে। অথবা শিকার যদি কোন গর্তে আশ্রয় নেয়,তাহলে সেই গর্ত খনন করে বের করে আনে। সাঁওতালরা সাধারনত অন্যান্য জাতি-গোত্রের তুলনায় অনেকটাই বেশি একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। এ ধরনের একটি শিকারী দলের দেখা মেলে গত বুধবার বিকেল কাবিলপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে। পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ইউনিয়নের সখিপুর আদিবাসী পল্লীর বাসীন্দা। পায়ে হেঁটে দলটি শিকারের সন্ধানে দীর্ঘ বিশ কিলোমিটার পথ মাড়িয়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরের ঝোঁপ-ঝাড়, জঙ্গল এমনকি ফসলী জমি গম,সরিষা,ভুট্টার ক্ষেত যেখানেই শিকারের আনাগোনা অনুমান করেত পারে সেখানেই ছুটছে। দুপুর পর্যন্ত তারা শিকার করেছে বেশ কয়েকটি গাড়োয়া ও খেকশিয়াল নামক বণ্যপ্রাণী। প্রত্যেকটা প্রাণীর ওজন হবে প্রায় ৮ হতে ১০ কেজি পর্যন্ত। এ সময় সাঁওতাল ২ যুবকের কাঁধে লাঠিতে ঝুলানো ৪টি শিয়াল। অন্য দুই জনের কাধে বস্তায় রাখা হয়েছে শিকার করা গারোয়া বা বন বিড়াল, বড় ইঁদুর, কাঠ বিড়ালি, খরগোশ। এই শিকারী দলের নেতা রবিন মার্ডি(৪০) ও সুমন মর্মুর(৩৫) সাথে এ প্রতিনিধির কথা হলে তারা জানায়, দাদা আমাদের আর পোষায় না। আগের মতো বন-জঙ্গল নেই। চারদিকে ফাঁকা তাই শিকারের দেখা পাওয়া যায় না। যদিও দুই-একটি পাওয়া যায়-এতে পোষায় না। আমরা এখন অনেকেই পরের জমিতে কৃষিকাজ করি। কাজকর্ম না থাকলে জীবিকার তাগিদে দলবদ্ধ হয়ে শিকারের সন্ধানে বের হই। তবে আজকে ভালো শিকার হয়েছে। আর ঘরের রমনীরা বাঁশঝাড়, বন-জঙ্গলে মাটির নিচ থেকে আলু তুলে নিয়ে আসে। এসব খেয়েই পরিবার পরিজন নিয়ে কোনমতে বেঁচে থাকি। এখন আমরা কিছুকিছু সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি। সব মিলে বেঁচে আছি। শিকার ধরার কৌশলাদি জানতে চাইলে তারা বলেন- আমাদের চোখ আর তীরের নিশানা মিস হয় না। প্রথমে শিকারকে লক্ষ্য করে হাতের তীর ছুঁড়ে মারি। এতে শিকার গর্তে ঢুকে গেলে শাবল দিয়ে মাটি খুঁড়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করে আহত করি। আর যদি শিকার দৌঁড়ে পালাতে চায় তাহলে আমাদের সাথে থাকা তীর-ধনুক দিয়ে আহত করে ধরে ফেলি। আমরা শিকারের উদ্দেশ্যে বের হলেই গ্রামের লোকজনরা আমাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এ দৃশ্য দেখে আমরা মজা পাই। বণ্যপ্রাণী নিধনের কোন নিয়ম নেই ,এ তথ্য তাদের জানা নেই। জানতে চেষ্টা করে না কখনো। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে চতরা ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহিন বলেন-উপজেলার মধ্যে চতরা ইউনিয়নে প্রায় ১হাজার সাঁওতাল পরিবার বসবাস করে। কিছু সংখ্যক সাঁওতাল পরিবারকে ইতোমধ্যে সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন ভাতা’র আওতায় আনা হয়েছে। এরপরেও তাদের আবাদি জায়গা জমি না থাকায় সারা বছর অন্যের দ্বারস্ত হয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। তবে প্রতি বছর শীত মওসুম এলেই তারা সংঘবদ্ধ হয়ে শিকারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। এটা তাদের এক ধরননের নেশাও বটে।