পিরোজপুরের স্বরুপকাঠি (নেছারাবাদ)উপজেলাটি দেশের কুটিরশিল্প সমৃদ্ধ এলাকার মধ্যে অন্যতম উপজেলা। নারিকেলের ছোঁড়ার আশঁ দিয়ে ম্যাড, ক্রিকেট ব্যাট, ক্রিকেট ষ্ট্যাম্প, বাস গাড়ী পরিস্কার করার জন্য নারিকেলের আঁশ দিয়ে ব্রাস তৈরি ও বেল ইত্যাদি সামগ্রী তৈরিতে স্বরুপকাঠি আজ বিশে^ সুপরিচিত। এসব শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থেকে দু‘ই হাজার সাত শত নারী পুরুষ জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন। নুন আনতে পান্তা শেষ, এসব পরিবারের মহিলা ও তাদের স্কুল-কলেজ পড়-য়া মেয়েরাও মায়ের সাথে সহাযোগীতা করছে নারিকেলের ছোঁবড়া দিয়ে ক্রিকেট খেলার প্রাকটিসের জন্য ক্রিকেট ম্যাট তৈরি কাজে। ক্রিকেট প্রাকটিসের জন্য প্রধানতম সামগ্রী এ ম্যাট তৈরি হয় সুটিয়াকাঠির বেলতলা, জোঁড়া ব্রিজ, নান্দুহার ও সোহাগদলের ভাইজোড়া এলাকারয়। এ শিল্পে স্বাবলম্বী হয়েছে কয়েক শত নারীরা। ক্রিকেট ম্যাট তৈরির প্রথম উদ্যোক্ত ব্যাক্তির নাম কাবারেক। ১৯৭৮ সালের দিকে কাবারেক মিয়া প্রথমে ক্রিকেট ম্যাট তৈরির জন্য নারিকেল ছোঁবড়া দ্বারা আঁশ তৈরি শুরু করেন। পাকিস্তান আমলে শ্রীলঙ্কা ভারত থেকে ছোঁবড়া দিয়ে তৈরি কৃত্রিম ম্যাট আমদানি করে এ দেশে ক্রিকেট প্রাকটিসে ব্যবহার করা হতো। এরপর পাপোশ ব্যবসায়ী কাবারেক মিয়া ১৯৮৪ সালে ঢাকায় নারিকেলের ছোবড়ার তৈরি ক্রিকেট ম্যাট দেখে বাড়িতে এসে ক্রিকেট খেলার ম্যাট বানানো শুরু করেন। সে সময়টায় ক্রিকেট ম্যাটের চাহিদা কম থাকার কারণে কারখানাটি বেশ লোকশানে পড়লে বেশীদিন চালু রাখতে পারেননি। ১৯৮৮ সালে এই প্রজেক্টটি তিনি আবার চালু করার উদ্যেগ নিলেও তেমন একটা সুবিধা জনক স্থানে আসতে পারেননি তিনি। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৯ সাল থেকে ক্রিকেট ম্যাট তৈরি শুরু করেন দি পিপলস কয়ার ই-াষ্ট্রিজের মালিক মোঃ মহিউদ্দিন (তোতামিয়া)। ক্রিকেট ম্যাট তৈরির কারিগররা জানান, ৬৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও আট ফুট চওড়া এবং প্রায় আধা ইঞ্চি পুর একটি ম্যাট তৈরি করতে চার শ্রমিকের পাঁচ দিন সময় আগে। সব মিলিয়ে এধরনের একটি ক্রিকেট ম্যাট তৈরি করতে খরচ হয় ৩০/৩৫ হাজার টাকা। সরজমিনে দি পিপলস কয়ার ই-াষ্ট্রিজসহ ম্যাট তৈরি স্পটগুলো ঘুরে দেখা য়ায় ম্যাট তৈরির কারিগররা শাড়ি বোনানোর মত নারিকেলের ছোঁবড়া দিয়ি রশি যাকে আঞ্চলিক ভায়ায় কাতরা বলে, সেই কাতরা বা রশি দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় হাজার শ্রমিকরা ক্রিকেট প্রাকটিকস কৃত্রিম ম্যাট তৈরি করছেন। ম্যাটের ওপর দুই স্তর ও নিচে এক স্তর কাতরা রশি দিয়ে মজমুদ এ ম্যাট তৈরি করেন শ্রমিকরা। দি পিপলস কয়ার ই-াষ্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী মহিউদ্দিন জানান, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ক্রিকেট একাডেমিতে নারিকেলের ছোবড়ার তৈরির ক্রিকেট ম্যাট এখান থেকে সরবরাহ করা হয়। তিনি দাবি করেন জাতীয় ও অন্যান্য প্রাকটিস ক্রিকেট খেলার মৌসুমে ৪০/৪৩টি ক্রিকেট ম্যাটের চাহিদা রয়েছে। এ মৌসুমে লক্ষ্যধিকের অধিক তার লাভ থাকে। পিরোজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা নকীব বলেন, দেশের ক্রিকেট খেলার অনুশীলনে স্বরুপকাঠির কুটিরল্পজাত ক্রিকেট উপকরণ বিশেষ অবদান রাখছে। এছাড়াও স্বরুপকাঠি আর এক কুটির শিল্পের নাম ক্রিকেট ব্যাট শিল্প। ক্রিকেট খেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠায় ক্রিকেট ব্যাট প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার বলদিয়া, বিন্ন গ্রাম, উড়িবুনিয়া, চামী, গগণ, জিলবাড়িী ও ডুবির হাটসহ ১১টি গ্রামে গড়ে ওঠেছে প্রায় দু‘ই শতাধিক ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কারখানা। বিভিন্ন ধরণের ব্যাট তৈরি হয় এসব ব্যাট কারখানা গুলোতে। এখানকার তৈরিকৃত ক্রিকেট ব্যাট দেশের চাহিদা পুরনের পর। ২০১৮ সাল থেকে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া নেপাল, ভুটন, তাইওয়ান, তাজিকিস্তান, কাতার, ওমান, ইরান, সৌদি আরব ও বুলগেরিয়াসহ ১৭ বর্হিবিশে^ এখানকার ক্রিকেট প্রাকটিকস কৃত্রিম ম্যাট রপ্তনী করে বছরে কোটি টাকা রাজস্ব হচ্ছে। উড়িবুনিয়ার ব্যাট তৈরি কারিগর সোহেল আমীন বলেন, করোনার কারণে এ বছর তাদের ব্যাবসা আগের চেয়ে মন্দ যাচ্ছে। অন্যদিকে ক্রিকেট খেলার আর একটি উপকরণ ষ্ট্যাম্পর এগুলো তৈরি হয় কৌরিখাড়ার বিসিক শিল্প নগরীর বিভিন্ন কারখানায়। নগরীতে নারিকেলের ছোবড়ার আঁশ দিয়ে গাড়ি পরিস্কার করার ব্রাশ তৈরি। ক্রিকেটসহ এসব সামগ্রী তৈরিতে নারিকেলের ছোবড়া, দেশি কাঠ কদম, ছাতিয়ান, গেওয়া, শিমুল, গামারী, দেবদারুসহ বিভিন্ন প্রকার কাঠ ব্যবহৃত হয়। নেছারাবাদ বিসিক শিল্প নগবীর ম্যনেজার শাহীদুর রহমান বলেন, শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান উন্নয়নের ক্ষেত্রে সব ধরনের সহায়তা করা হয়। যদি শিল্প মালিকের ক্ষুদ্র ঋনের প্রয়োজন হয় তাও সরকার স্বল্প মুনফা দিয়ে থাকে।