বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে দফায় দফায় নোটিশ করে যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। মাসের পর মাস বকেয়ার পরিমাণ পাহার সমান হলেও পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ফলে বিসিসি’র কাছে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা বকেয়া বিল নিয়ে চরম বিপাকে পরেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
সবশেষ গত ৩ মার্চ বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে একটি নোটিশ দিয়েছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। যা গত ৮ মার্চ সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগে এসে পৌঁছেছে। যদিও বকেয়া বিদ্যুৎ বিল সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান আমলের নয় জানিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ বলেন, বর্তমান পরিষদ নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছেন। তারপরেও পূর্বের বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে আলোচনা চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পানির পাম্প, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট, সড়ক বাতি, নগরভনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নাগরিক সুবিধার জন্য ওজোপাডিকো’র বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু সঠিকভাবে সিটি কর্পোরেশনের ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিল জমা হচ্ছেনা। বিশেষ করে তৎকালীন মেয়র মরহুম শওকত হোসেন হিরনের সময় থেকে বিদ্যুৎ বিলের পাহার জমতে শুরু করে।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরনের দায়িত্বকালীন প্রায় পাঁচ বছরে এক টাকার বিদ্যুৎ বিলও পরিশোধ হয়নি। এ কারণে বকেয়া বিলের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। পরবর্তী বিএনপির মেয়র আহসান হাবিব কামালের সময়কার বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের সময়ে কয়েক কিস্তিতে বিদ্যুৎ বিলের কিছুটা বকেয়া পরিশোধ করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে বকেয়া পরিশোধ আবার বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে বর্তমান মেয়রের সময়ে সেই বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ১৯৮ টাকা। বিশাল অংকের এই বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য সিটি কর্পোরেশনকে দফায় দফায় নোটিশ করা সত্বেও পরিশোধের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানীর বরিশাল বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন, মুলত ২০০৭ সাল থেকেই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া জমতে থাকে। তবে এর আগেও কিছুটা বকেয়া ছিলো। সেটা বেশি একটা নয়। বর্তমানে আমাদের দুটি জোনে বকেয়া বিদ্যুত বিলের পরিমাণ প্রায় ৪৭ কোটিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ বিক্রয় এবং বিতরণ কেন্দ্র-১ এ প্রতি মাসে বিল আসে প্রায় ২৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিক্রয় এবং বিতরণ কেন্দ্র-২ এ বিল আসে প্রায় ২০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে দুটি জোনে বিসিসি’র ব্যবহৃত বিল আসছে ৪৫ লাখ টাকা। কিন্তু কোন মাসেই সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করা হচ্ছে না। এজন্য আমরা দফায় দফায় নোটিশ করেও বকেয়া বিল আদায় করতে পারছি না। ফলে বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। এখন আমাদের মন্ত্রণালয় (বিদ্যুৎ) থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ বলেন, বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে অসংখ্যবার আলোচনা হয়েছে। কিভাবে এ সমস্যা সমাধান করা যায় সে ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসনের সভায় আমরা এই বিলের বিষয়টি উত্থাপন করেছি।
তিনি আরও বলেন, যে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটা অনেক পুরানো বিল। অর্থাৎ পৌরসভার আমল থেকে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পরতে শুরু করে। বর্তমানে প্রতি মাসের বিল মাসেই পরিশোধ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে আমরা ট্যাক্স পাবো, আর বিদ্যুৎ বিভাগ আমাদের কাছে বিদ্যুৎ বিল পাবে। প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল এবং ট্যাক্সের টাকা হিসেব করে উভয়পক্ষের বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে এখন আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন বলেও তিনি (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) উল্লেখ করেন।