দৈনিক ভোরের পাতাসহ বিভিন্ন অনরাইন পত্রিকায় গত ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারী কয়লা বানাতে গাছের সর্বনাশ শিরনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশে এলাকাবাসী সন্তুষ্টি প্রকাশসহ রিপোর্ট ফটো কপি করে পড়তে দেখা যায়। বস্তুনিষ্ঠু সংবাদ প্রকাশে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে দৃষ্টগোচর হয়। অবশেষে খুলনার পাইকগাছায় অবৈধ কয়লা তৈরীর চুল্লিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমতাজ বেগম বুধবার বিকেলে চাঁদখালীস্থ কপোতাক্ষ নদ ঘেষা ওয়াপদা রাস্তার পাশে গড়ে উঠা একাধিক কয়লা কারখানায় অভিযান চালান। যথাযত আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কালিদাসপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম গাজীর ছেলে এনামুল হক (৩৮) কয়লা ব্যবসায়ীকে ১০হাজার টাকা জরিমানা করেন। অভিযানে এলাকাবাসী সন্তুষ্টি প্রকাশ করেলও মিশ্র প্রক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেন। একাধিক চুল্লিসহ ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানো হলেও এক জনকে জরিমানা করায়। একটি চুল্লিতে প্রতিবার ২০০ থেকে ৩০০ মন পর্যন্ত কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতিবার কমপক্ষে ২৫ হাজার মন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। প্রতিমাসে প্রত্যেকটি চুল্লিতে ৩ থেকে চারবার কাঠ পুড়িয়ে কয়লা করা হচ্ছে। ফলে প্রতিমাসে কয়লার চুল্লিতে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ মন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ফলে ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতি সহ সামাজিক বন। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকায় বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, প্রকৃতি ধ্বংসসহ মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে এলাকাবাসী। অধিক লাভজনক হওয়ায় সব দিক ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসায় নেমে পড়েছেন এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নে চুল্লি চালাচ্ছেন ধামরাইলে আইয়ুব ও তার পার্টনার, ফতেপুর জিল্লুর ও তার পার্টনার। চাঁদখালী বাজারের পর থেকে সারিবদ্ধ চুল্লি চালাছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই জিয়াউর রহমান ওরফে কমল, মিন্টু, মিঠু, দিপু, লালটু, এস এম হাবিবুর রহমান, খোকন মেম্বার, সাঈদ, শাহাদাত সহ কয়েকজন। চাঁদখালীর পার্শ্ববর্তী কয়রা উপজেলায় নকশা এলাকায় চুল্লি চালাচ্ছেন মো. ইকরামিন সহ কয়েকজন। দু’উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় সংঘবদ্ধভাবে চুল্লি চালাছে। চুল্লি চালানোর জন্য চুল্লি মালিকদের রয়েছে একটি কমিটিও। চুল্লি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সবদিক ম্যানেজ করেন বলে জানিয়েছেন জিল্ল নামের একজন চুল্লি মালিক। এলাকার একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, কোন প্রকার বাধা-বিঘœ ছাড়াই নির্ভয়ে চুল্লি চালাছেন তারা। এ সকল কাঠ কয়লার চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে চোখের বিভিন্ন সমস্যা সহ শ্বাসতন্ত্র জনিত সমস্যা যেন লেগেই থাকে। চুল্লি মালিকরা সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। যে কারণে তাদের এই কাজে তেমন কোনো বাধা আসে না। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না। পাইকগাছা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বন উজাড় করে সংগ্রহ করছে বৃক্ষ। চুল্লি মালিক জিল্লু বলেন, আমাদের কোনো কাগজপত্র লাগে না, বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে এটা চালাতে হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর কোন অভিযান পরিচালনা করেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, বছরে একবার খুলনা থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন আসেন, কিন্তু আসার আগে ওখান থেকে ফোনে জানিয়ে দেন, তখন সবাই কয়েকদিন চুল্লি বন্ধ করে রাখি। চুল্লি কারখানার পাশে কয়েকটি ইট ভাটায় সমানতালে বিপুল পরিমাণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।