ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পরদিন ২৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ছিল মেহেদি হাসান মোহনের মেয়ে লিলিয়া মেহেদির প্রথম জন্ম দিন। মেয়ের প্রথম জন্মদিনে কান ফুটাতে এক জোড়া ডায়মন্ডের দুলও কিনেছিলেন। জন্মদিনের পার্টি আয়োজন চলছিল বাসায়। কিন্তু আগের দিন বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টায় রাশিয়ার হামলায় সব এলোমেলো হয়ে যায়। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন মোহন।
জীবন বাঁচাতে মেয়ের জন্য কেনা কানের দুলও নিতে পারেননি। সব ফেলে শুক্রবার ইউক্রেনের স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় গাড়ী নিয়ে পোল্যান্ডের উদ্দেশ্য স্বপরিারে বের হয়ে পড়েন মোহন। সঙ্গে ছিলেন বন্ধু আবদুল আওয়াল, তার স্ত্রী ও দুই সন্তান।
মোহন যশোরের মনিরামপুর উপজেলার সাতগাতী গ্রামের মৃত ডাঃ মহিউদ্দীনের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেনে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন।
সীমান্ত পাড়ি দিতে দুঃসময়ে অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মোহন জানান (মেসেঞ্জারের মাধ্যমে), কোভেল শহর পেরিয়ে পোল্যান্ড সীমান্তে আসতে একটানা ১৮ ঘন্টা গাড়িতে ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী তানিয়া সুলতানা। এরমধ্যে টয়লেট আর গাড়ীতে তেল নেওয়া ছাড়া কিছুই করতে পারেননি। আসার আগে কিছু কাপড়-চোপড় আর শুকনো খাবার নিয়ে আসেন। প্রতিক্ষণে ক্ষণে মনে হচ্ছিল এই বুঝি বোমা এসে পড়ছে। চরম আতংকের মধ্যে পার হচ্ছিলেন তারা।
মাত্র ৬ কিলোমিটারের রাস্তা পাড়ি দিতে ৩দিন পার হয়েছে। সীমান্তের রাস্তায় হাজার হাজার গাড়ি। বাচ্চাদের চিৎকারে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। যানজটের মধ্যে গাড়ি থেকে বেরিয়ে কেউ কেউ রাস্তায় হাটাহাটি করলেও সবাই ছিলেন গাড়ির ভিতর। সবাই খুব কাছাকাছি, কিন্তু কারো মুখে কোন কথা নেই। শুধু চোখে মুখে আতংক। বাড়ি-গাড়ি, সম্পদ সব কিছু কিয়েভে ফেলে রেখে এসেছেন। জীবনে বেঁচে থাকাটাকেই পরম ভাগ্য বলে মনে করছেন তিনি।
তিনি আগে থেকেই শুনেছেন পাসপোর্ট ও গাড়ির কাগজপত্র থাকলেই পোল্যান্ডে প্রবেশের অনুমতি মিলছে।
গাড়ীর ভয়াভহ যানজট যা ভাষায় অবর্ণনীয়। অবশ্য পেল্যান্ড সীমান্তে আসলে সেখানকার বাংলাদেশী দূতাবাস খাওয়া-দাওয়াসহ সর্বাত্বক সহযোগিতা করেছে। এ ছাড়া ডকুমেন্টস ট্রাভেল পাসসহ নানা ধরনের সহযোগিতা করেছে। নিজের গাড়ি সীমান্তে রেখেই পোল্যান্ড সীমান্তে আগে থেকে রাখা দূতাবাসের গাড়ীতে উঠে আবারো পথ চলা শুরু হয়। পোল্যান্ডে দুই দিন থাকার পর সুইজারর্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হনা তারা। ৩ মার্চ চেকরিপালিক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে পৌছান তারা। সেখানে আগে থেকেই বাংলাদেশের দূতাবাসের বাস দাড়ানো ছিল। ৫ মার্চ তারা সুজারল্যান্ডের রাজধানী বার্ন-এ পৌছান। সেখানে এক অচেনা শহরে বেঁচে থাকার তাগিদে আবার নতুন করে কিছু করার চেষ্টা করছেন তিনি। সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন মোহন ও তার পরিবার।
এদিকে রাশিয়ার আগাসনের প্রথম দিন থেকেই চরম উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় আছেন বাংলাদেশে থাকা মোহনের মা লিলি বেগম ও ভাই-বোনেরা। ছেলে-বৌমা ও নাতনীর চিন্তায় নাওয়া-খাওয়া ছিলোনা তাদের।
মোহনের মা লিলি বেগম বলেন, শুনেছি মোহন পরিবার নিয়ে সুইজারল্যান্ডে নিরাপদে আছে। এ খবর টুকু পেয়ে এখন একটু ভাল লাগছে। প্রবাসে থাকা ছেলে-বৌমা ও নাতনীর জন্য দেয়া চেয়েছেন তিনি।