ইজারা পাওয়ার সকল শর্ত পূরণ করলেও জামানতের পুরো টাকা ক্রিসেন্ট জুট মিলের জন্য জমা দিতে পারেনি খুলনার ফুলতলার মিমো জুট লিমিটেড। ফেব্রুয়ারি মাসে ৫০ লাখ টাকা জামানত জমা দিয়ে দু’ দফা সময় প্রার্থনা করেছে ইজারা পাওয়া প্রতিষ্ঠান। ইজারা পাওয়ার পূর্বে জামানত হিসেবে দু’ বছরের ভাড়া বাবদ ২১ কোটি ১৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইজারা পাওয়ার জন্য ফুলতলার মিমো জুট সকল শর্ত পূরণ করে। প্রতি মাসে ৮৮ লাখ ৫ হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ হয়। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইজারা পাওয়া প্রতিষ্ঠান ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়ে মার্চ মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধের অঙ্গিকার করে সময় প্রার্থনা করে। মার্চের প্রথম দিকে আবারও তারা সময় চেয়েছে। বিজেএমসি সময় প্রার্থনা করার আবেদন পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। ক্রিসেন্ট জুট মিলের জেনারেল ম্যানেজার খান কামরুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ই সময় বাড়ানোর অনুমতি দেওয়ার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। বিজিএমসি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে বলা হয়েছে, ক্রিসেন্ট জুট মিলের ইজারা পেয়েছে মিমো জুট লিমিটেড নামক একটি বেসরকারী পাটকল। এ প্রতিষ্ঠানের মালিক খুলনার ফুলতলা উপজেলার বাসিন্দা। ২০ বছরের জন্য পাটকলটি বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। অন্যান্য শর্তের মধ্যে অন্যতম ইজারা গ্রহীতারা পাট সম্পর্কিত পণ্য ছাড়া এ প্রতিষ্ঠানে অন্য কোন পণ্য উৎপাদন করতে পারবে না। ২৪ মাসের ভাড়া বিজেএমসির তহবিলে জামানত হিসেবে জমা দিতে হবে। তারপর রাষ্ট্রায়ত্ব এ প্রতিষ্ঠান ইজারা গ্রহীতার কাছে হস্তান্তর করা হবে। বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক অফিসের কর্মকর্তা মুন্সি রফিকুল ইসলাম তথ্য দিয়েছেন, প্রতিমাসের ভাড়া বাবদ ৮৮ লাখ ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসেবে ২৪ মাসের ভাড়া ২১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। জামানত জমা ও চুক্তি সাক্ষরের পর ইজারা গ্রহীতাকে মিল বুঝিয়ে দেয়া হবে। ইজারা গ্রহীতা কারখানার যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সুযোগ পাবে, তবে জমি ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না। অপর একটি সূত্র জানান উৎপাদন বন্ধ থাকলেও প্রতি মাসে এ মিলের কর্মচারী, বিদ্যুৎ বিল, ওয়াসা ও টেলিফোন বিল বাবদ ১ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। শ্রমিক সংগঠনের বিভিন্ন সূত্র বলেছেন, তারা যেকোন মূল্যে বেসরকারীকরণ প্রতিহত করবে।
খালিশপুরের গোয়ালপাড়া এলাকায় ১৯৫২ সালে এ মিল স্থাপিত হয়। ১১৩ একর জমির ওপর মিল স্থাপনে প্রথম পর্যায়ে বিনিয়োগ ছিল ১৫ লাখ টাকা। পাকিস্তানের শিল্পপতি আগাখান গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজ, র্যালী ব্রাদার্স লিঃ এ- জেমস্ মেকলি এ- সন্স লিঃ-এর যৌথ অংশীদার ৫১ শতাংশ এবং পাকিস্তান সরকারের ৪৯ শতাংশ মালিকানায় ১৯৫৪ সাল থেকে উৎপাদন শুরু হয়। ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ আওয়ামী লীগ সরকার মিলটি জাতীয়করণ করে। পরবর্তীতে ক্রমাগত লোকশানের কারণে ২০২০ সালের ৩ জুলাই এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। বৃহত্তম এ পাটকলের বয়স ৭০ বছর।