বহু চড়াই উৎরাই পার করে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর, আলোর মূর্খ দেখতে চলেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ফেরিওয়ালা মিরাজুল হকের স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগার, মিরাজুল হক কয়েক বছর ধরে এই পাঠাগার নির্মানের জন্য এলাকার জনপ্রতিনিধি, সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সাধারন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। অবশেষে কিছু দানশীল ও মুজিব আদর্শের সৈনিকদের অর্থিক সহযোগীতায় এগিয়ে চলেছে পাঠাগারের নির্মান কাজ। তবে প্রয়োজন মতো আর্থিক সহযোগীতা না পাওয়ায় ধীর গতিতে চলছে এই পাঠাগারের নির্মানের কাজ। নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে এলাকার সূধী মহল, জনপ্রতিনিধি, সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও মহান স্বাধীনতার স্থাপতি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারন করা আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মিদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন ফেরিওয়ালা মিরাজুল হক।
মিরাজুলের জন্ম ১৯৬৫ সালে, তার পিতার অর্থিক অবস্থা ভালো না থাকার কারণে বেশী লেখাপড়া করতে পারেননি। সে ১৯৭৮ সাল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ মেইন বাসষ্ট্যান্ডে হকারীকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন। এজন্য সবাই তাকে ফেরিওয়ালা মিরাজুল হক বলেই চিনে। তিনি এই ষ্ট্যান্ডে কখনো তিলের খাজা, কখনো ঝুরি ভাজা, কখনো হাতপাখা, রুমালসহ বিভিন্ন সময় জিনিষ ফেরি করে বিক্রয় করেন। সংসার জীবনে তার দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক। তিনি পিতা হিসাবে একজন গর্বিত পিতা কারণ হকারী করেই মেয়েকে ভালো সংসারে বিয়ে দিয়েছেন। এবং বড় ছেলে জাহাঙ্গীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টারস শেষ করে ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার্থী এবং চাকুরীর জন্য চেষ্টা করছেন। আর ছোট ছেলে আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব ধর্ম ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে শিক্ষার্থী এবং মহামেডানের একজন কৃতী ফুটবলার।
মিরাজুল হক জানান, অর্থাভাবে সামান্য পড়াশুনা করে সেখান থেকে ছিটকে পড়ার কষ্ট থেকে বই পড়ার নেশা তার। আর এই বই পড়েই তিনি জ্ঞান অর্জন করে হয়েছেন স্ব শিক্ষায় শিক্ষিত। আর অর্থাভাবে শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়া মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়ায়ে দিতে ১৯৯২ সালে স্বপ্ন দেখেন একটি গণপাঠাগারের। ১৯৯৮ সালে পাঠাগার স্থাপনের উদ্যোগ নিলে রাজনৈতিক জটিলতার কারণে সে চেষ্ঠা ব্যর্থ হয়। এতোদিনে তিনি হকারি করেই কিনেছেন প্রায় ৩ লাখ টাকার মহান মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধুর জীবনী, ধর্মগ্রন্থসহ বিভিন্ন রকম গল্পের ৪শতাধিক বই। এরমধ্যে অনেকবার পাঠাগার করতে ব্যর্থ হবার পর ২০১৪ সালে কিছু মুজিব অনুসারীদের নিয়ে কলেজপাড়ায় স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগার। আবারও পদ পদবী এবং স্বার্থের বেড়াজালে শুরু হয় রাজনৈতিক জটিলতা। এরপর ৩ বছর জায়গার অভাবে তার ক্রয়কৃত সবগুলো বই পলিথিনে মুড়িয়ে নিজের ঝুপড়ি ঘরে রেখে দেন।
দীর্ঘ বছর অপেক্ষা করেও হাল ছাড়েননি মিরাজুল। স্থানীয় মিডিয়া কর্মিদের সহযোগীতায় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয় মিরাজুলের বঙ্গবন্ধু স্মুতি পাঠাগারের কাহিনী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আইডির মাধ্যমে তিনি তার স্বপ্নের পাঠাগারটি বাঁচিয়ে রাখার জন্য সর্ব সাধারনের নিকট সাহায্যের আবেদন জানান। এসব মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর নজরে আসে কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি, সাংবাদিক, সূধীমহল, দানশীল ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের। এসব মানুষের আর্থিক সহযোগীতায় মিরাজুলের উদ্যোগে জায়গা নির্ধারন করে শহরের কলেজ রোডে শুরু করা হয় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগারের নির্মাণ কাজ। এবং গত বছরের নভেম্বর মাসের ১ তারিখে পাঠাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনেরর উদ্বোধন করেন কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ। তিনি আরও জানান, প্রয়োজন মতো সহযোগীতা না পাওয়ার কারণে নির্মান কাজ চলছে ধীর গতিতে। টাকার অভাবে মাঝে মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে নির্মাণ কাজ। বঙ্গবন্ধুর নামে এই পাঠাগারটির পুরোপুরি দৃশ্যমান করতে এখনো প্রায় অর্ধলক্ষ টাকার প্রয়োজন। স্বপ্নের পাঠাগারটির কাজ সমাপ্ত করতে সর্ব সাধারন ও মুজিব আদর্শের সৈনিকদের প্রতি আর্থিক সহযোগীতা কামনা করেছেন পাঠাগারের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই এবং ফেরিওয়ালা মিরাজুল হক।