রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ্ বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু একজন বিশ্ববরেণ্য রাজনীতিবিদ ছিলেন। মানুষকে কিভাবে জাগ্রত করা যায়, দেশকে কিভাবে স্বাধীন করা যায়, একটি দেশকে কিভাবে সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা যায় সে পরিকল্পনাও তাঁর ছিল। তাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে আমরা আরও আগেই উন্নত দেশ হিসেবে বিশে^র দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারতাম।’ বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের অঙ্গীকার, সকল শিশুর সমান অধিকার’ শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাঙালি জাতির দুর্ভাগ্য যে আমরা বঙ্গবন্ধুকে দেশ গড়ার মতো সময় দেইনি। যিনি স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন তাঁকেই আমরা বাঁচতে দেইনি। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ বছর সময় লাগে কিন্তু, বঙ্গবন্ধু পেয়েছিলেন মাত্র ৪ বছর। অথচ, আন্তর্জাতিক মানের একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে নেতৃত্বের সব গুণাবলিই তাঁর ছিল।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস সারাবিশ^ জানে। দেশের জন্য বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের ৩৩ বছর কাটিয়েছেন। তিনি ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে একটি জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। তাঁর ছিল জাতিকে জাগিয়ে তোলার অসাধারণ ক্ষমতা। তিনি সেদিন সাড়ে সাত কোটি মানুষকে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে উজ্জ্বীবিত করতে পেরেছিলেন। আর এখন আমরা যখন ঝিমিয়ে পড়ি, তখন তাঁর বক্তব্য শুনে অনুপ্রাণিত হই।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, জাতির জনক বলেছিলেন সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আজ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁরই সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে দেশ গড়ার কাজে লেগে পড়েছি। একটু দেরিতে হলেও বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন আমরা তা বিনির্মাণ করব। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশে পরিণত হব। এ সময় তিনি নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করে সোনার বাংলা নির্মাণের কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের (রাবি) বঙ্গবন্ধু চেয়ারের অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহা বলেন, কোনো শিশু যে কোনো জায়গায় জন্ম গ্রহণের পর প্রকৃতিগতভাবে কিছু অধিকার পেয়ে থাকে কিন্তু এতেই তার সঠিক বিকাশ হয় না। প্রত্যেক শিশুর বিকাশের জন্য প্রয়োজন উন্মূক্ত পরিবেশ। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে শিশুদের প্রতি আমাদের অপরিসীম দায়িত্ব রয়েছে। একটি জাতির ভবিষ্যত যেহেতু শিশুদের ওপর নির্ভর করে তাই তাদেরকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার বিকল্প কিছু নেই। সে কারণে প্রতিবছর বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করে কোমলমতি শিশুদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়ে উঠার উৎসাহ প্রদান করা হয়।
তিনি বলেন, একটি শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য পরিমিত খাবার ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা পাচ্ছে কিনা, তার সঠিক মানসিক বিকাশের জন্য আমরা পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারছি কিনা তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই শিশুদের অধিকার আদায় হবে, জাতির ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবদুল জলিলের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আবদুল বাতেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক, পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন, বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহিন আক্তার রেনী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মো. আবদুল মান্নান।
আলোচনাসভার শুরুতে শিশুদের সঙ্গে অতিথিদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কেক কাটেন বিভাগীয় কমিশনার। সভা শেষে বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সকাল ১০টায় মহানগরীর বঙ্গবন্ধু চত্বরে জাতির জনকের ম্যূরালে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। দিবসটি পালন উপলক্ষে এদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভাগীয় শহর রাজশাহীর সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
এদিকে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী রাজশাহী মাহানগর আওয়ামী লীগ, রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (রামেবি), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (রুয়েট), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ছাড়াও আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন সহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করা হয়।
আর নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয় ও বিভাগীয় পাবলিক লাইব্রেরি বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও মহান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন ও ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার করে। এছাড়াও এদিন বিকেল ৪টায় রাজশাহী কালেক্টর মাঠে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিশাল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি নগরীর বঙ্গবন্ধু চত্বর থেকে শুরু হয়ে কালেক্টরেট মাঠ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এছাড়াও এদিন বাদ যোহর মসজিদে এবং বিকেল থেকে মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে জাতির জনকের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল, কেন্দ্রীয় কারাগার, শিশু পরিবার, শিশুসদন, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, ছোটমনি নিবাস ও এতিমখানাগুলোতে এতিম এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মিষ্টি বিতরণ করা ছাড়াও উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে সাত দিনব্যাপী বইমেলা। নবজাগরণের উদ্যোগে শুরু হওয়া এ বইমেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবার জন্য খোলা থাকবে।