ফরিদপুরের সদরপুর-চরভদ্রাসন সীমান্তবর্তী এলাকায় পদ্মা নদীর আকোটেরচর আন্তঃইউনিয়ন ঘাট দিয়ে বিধি নিষেধ অমান্য করে ষ্পিড বোটে নিয়মিত পদ্মা পারাপার করা হচ্ছে ঢাকাগামী যাত্রীদের। এ আন্তঃ ইউনিয়ন ঘাটটির অবস্থান সদরপুর উপজেলার আকোটেরচর ইউনিয়নের শেষ সীমানায়। ওই ঘাট থেকে মাত্র এক কি.মি. উত্তর দিকে পদ্মা নদীর জল সীমানায় রয়েছে চরভদ্রাসন উপজেলার গোপালপুর-মৈনট আন্তঃজেলা ঘাটের অবস্থান। বিধিমতে, শুধুমাত্র আন্তঃজেলা ঘাট দিয়েই বিভিন্ন জেলার যাত্রী পারাপার করা বৈধ। আর আন্তঃ ইউনিয়ন ঘাটগুলো তাদের নিজস্ব চৌহদ্দীর মধ্যে থেকে নৌযান চলাচলের ক্ষমতা রাখেন।
কিন্ত পদ্মা নদীর আকোটেরচর আন্তঃ ইউনিয়ন ঘাট ইজারাদার স্বপন পাটনীর পক্ষে, স্থানীয় প্রভাবশালী শাহীন আনোয়ার (৬০) মাত্র ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে আন্তঃ ইউনিয়ন ঘাটটি ইজারা নিয়ে ঘাটের চৌহদ্দী সীমানা অতিক্রম করে ঢাকা জেলাধীন দোহার উপজেলার বিলাশপুর টু আকোটেরচর ঘাট হয়ে অবৈধভাবে ঢাকাগামী যাত্রীদের ষ্পিডবোটে পারাপার করে চলেছেন। ওই ঘাট মালিকের স্বেচ্ছাচারীতার কারণে পার্শ্ববতী চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদীর গোপালপুর-মৈনট আন্তঃজেলা ঘাটটি চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। একই সাথে উপজেলার গোপালপুর-মৈনট আন্তঃজেলা ঘাটের অতিত ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এবং ভবিষ্যতে সরকার এ ঘাট থেকে মোটা অংকের রাজস্ব হারাতে পারে বলেও অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করে চলেছেন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আকোটেরচর আন্তঃ ইউনিয়ন ঘাট থেকে আন্তঃজেলা ঘাটের চলমান কার্যক্রম পরিচালনা সম্পূর্ন অবৈধ উল্লেখ করে বার বার অফিসিয়াল চিঠি ইস্যু করলেও বাস্তবে প্রশাসন কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেয় নাই বলে গোপালপুর-মৈনট ঘাট মালিক কর্তৃপক্ষ হতাশা ব্যাক্ত করেছেন।
এদিকে, গত একমাস কাল ধরে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাত দিয়ে আকোটেরচর ইউনিয়ন ঘাট দিয়ে আন্তঃজেলা ঘাটের যে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা সম্পূর্ণ অবৈধ বলে ঘোষনা দিয়ে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। একই সাথে আকোটেরচর আন্তঃইউনিয়ন ঘাট মালিক কর্তৃপক্ষ ওই ঘাট দিয়ে খুব সহজে এবং কম খরচে ঢাকা যাতায়াতের সুখবর উল্লেখ করে এলাকা জুড়ে আরেকটি মাইকিং করে চলেছেন। দিনরাত এ দুই ধরনের মাইকিং শুনে জনমনে রহস্যের সৃষ্টি হলেও প্রশাসনের কোনো মাথা ব্যাথা নেই।
সম্প্রতী আকোটেরচর ইউনিয়ন ঘাট থেকে দোহার উপজেলার বিলাশপুর ঘাট দিয়ে লঞ্চ/ষ্পিড বোটে যাত্রী পারাপার সম্পূর্ণ অবৈধ এবং তা স্থায়ী বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়ে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মোঃ হেলাল মাহমুদ শরীফ সদরপুর, চরভদ্রাসন ও দোহার উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বরাবর ০৫.৪১.৩০০০.০০৯.০৬.০০৫. ২১-৬৯ (সং) এবং ০৫.৪১.৩০০০.০০৯.০৬.০০৫. ২১-৭৭ (সং) নং স্মারকে দু’টি পত্র দিয়েছেন। একই সাথে ওই ইউনিয়ন ঘাট থেকে দোহার উপজেলার বিলাশপুর ঘাট দিয়ে লঞ্চ/ষ্পিড বোটে যাত্রী পারাপার সম্পূর্ণ অবৈধ বলে উল্লেখ করে এবং ভবিষ্যতে ইজারাদার চুক্তি ভঙ্গ করলে ওই ইউনিয়ন ঘাটটি বাতিল করার অনুরোধ জানিয়ে গত ১৩ মার্চ ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর ডিও লেটার ইস্যু করেছেন। এরপরও আকোটেরচর ইউনিয়ন ঘাট থেকে বহাল তবিয়তে অবৈধ উপায়ে নিয়মিত আন্তঃজেলা ঘাটের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যপারে আকোটেরচর ইউনিয়ন ঘাট ইজারাদার স্বপন পাটনীর পক্ষে শাহীন আনোয়ার জানায়,“ আকোটেরচর ইউনিয়ন ঘাটটি এ বছর আমি ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছি এবং ইজারামূল্য পরিশোধ করেছি। কিন্তু প্রশাসন আমাকে ঘাট বুঝিয়ে দেয় নাই। তিনি আরও জানান, এ ঘাট থেকে পদ্মার অপর পারের দোহার উপজেলার বিলাশপুর ঘাটের মাধ্যমে ষ্পিডবোটে নিয়মিত আমি ঢাকার যাত্রীদের পারাপার করে চলেছি। এ সময় ঘাট পরিচালনা বিধি নিষেধ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি মনগড়া বিধি উল্লেখ করে জানান, আন্তঃইউনিয়ন ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে দেশের যেকোনো প্রান্তে যাওয়া যাবে কিন্তু যাত্রী আনা যাবে না”। আর ওই ইউনিয়ন ঘাটের আরেক অংশীদার শেখ সামাদ বলেন, “ যেহেতু সরকার নাম দিয়েছে আকোটেরচর লঞ্চ ঘাট, তাই লঞ্চতো পানির উপর দিয়েই চলবে, স্থলেতো আর লঞ্চ চলবে না”।
আর ওই ঘাটের পার্শ্ববতী গোপালপুর-মৈনট আন্তঃজেলা ঘাট মালিক আবুল কাশেম খান জানান,“এ বছর আমরা ৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ইজারা মূল্যে এ ঘাট ডাক নিয়েছি। আকোটেরচর ইউনিয়ন ঘাট মালিক শাহীন আনোয়ার আমাদের সাথে দ্বন্দ্ব করে এ বৈধ ঘাটের ক্ষতি করার জন্য পার্শ্ববতী আকোটেরচর ইউনিয়ন ঘাট দিয়ে ঢাকার যাত্রীদের ষ্পিডবোটে পারাপার করে চলেছে। ওই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২/৩শ’ ঢাকা যাত্রী অবৈধভাবে পারাপার হচ্ছে। বার বার প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও আমরা কোনো ফল পাচ্ছি না। এ অবস্থার মধ্যে আগামীতে সরকারকে এত টাকা দিয়ে এ ঘাট আর কেউ নিবে না”।
এ ব্যপারে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তারেক মাহমুদকে জিজ্ঞেস করলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “ আকোটেরচর ইউনিয়ন ঘাট দিয়ে অবৈধ উপায়ে আন্তঃজেলা ঘাটের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে বেশ কিছু দিন ধরে আমি অভিযোগ শুনতেছি। কিন্তু সময়ের অভাবে ওই ঘাটে যাওয়া হয় নাই এবং বিষয়টি দেখার জন্য অফিসের কাউকেই পাঠাতেও পারি নাই। তিনি আরও বলেন, আসলে ওই ঘাটে মোবাইল কোর্ট করার মত পরিস্থিতি নাই, তবে তদন্ত করে আমরা ঘাটটি বাতিল করে দিতে পারবো”।
গত শুক্রবার আকোটেরচর আন্তঃইউনিয়ন ঘাট ঘুরে জানা যায়, এ ঘাটের আগের অবস্থান থেকে সরিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে কলাবাগানের ঝোপের মধ্যে নতুন করে ঘাট বসানো হয়েছে। চরভদ্রাসন উপজেলা সদর ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা গ্রামে পদ্মা পারের বিশাল কলাবাগানের মধ্যে দিয়ে অটোবাইক, রিক্সা ও ভ্যান চলাচলের জন্য পথ তৈরী করা হয়েছে। ওই কলা বাগানের মধ্যে আকোটেরচর ইউনিয়ন ঘাটের ব্যানার ও সাইনবোর্ট টাঙিয়ে পদ্মা পারে বাশের মাচাল বেধেঁ তৈরী করা হয়েছে ষ্পিডবোট ঘাট। এ ঘাট দিয়ে নিয়মিত ঢাকার যাত্রীরা পারাপার হচ্ছে। ওই ঘাটে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে এবং ক্যমেরা দেখে চলমান ষ্পিডবোটগুলো দ্রুত সরে যায়। এ সময় ছবি উঠাতে দেখে ঘাট মালিক শাহীন আনোয়ারের ছেলে আব্দুল্লাহ আরাফাত (২৫) ক্ষোভে সাংবাদিকদের বলেন, “ আপনাদের আরো কত ছবি লাগবে, আমাকে বলুন আমি ছবি উঠিয়ে আপনাদের দিব”।