খুলনায় বোরো মাঠে বাংলাদেশের মানচিত্রে ‘জিংক সমৃদ্ধ নতুন জাতের ধান ‘বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০’বা ‘বঙ্গবন্ধু ধান-১০০’ শোভা পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ধানের নামকরণ করা হয় ‘বঙ্গবন্ধু ধান-১০০’। রূপসা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে এ শস্য মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। এদিকে, প্রতিদিন এই বিশাল চিত্রকর্ম দেখতে ভিড় করছেন অনেকেই। পাঁচ বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ব্রি) এ জাতের ধান আবিষ্কার করে। এই জাতের ধান উৎপাদনে সময় অনেক কম লাগবে, ফলনও বৃদ্ধি পাবে। রোগ-বালাই ও পোকা-মাকড় আক্রমণের শঙ্কাও কম বলে জানিয়েছে কৃষি অধিদপ্তর। রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, নতুন জাতের ‘বঙ্গবন্ধু ধান-১০০’র প্রতি চাষিদের আকৃষ্ট করতে দুই রঙের চারা রোপণ করে মানচিত্রের মতো প্রদর্শনী ব্লক তৈরি করা হয়েছে। মানচিত্র ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার করা হয়েছে বেগুনি রঙের ধানের চারা। এ রঙের ধানের চারা আনা হয়েছে গাইবান্ধা থেকে। তিনি বলেন, জেলা অফিস থেকে ৫ কেজি বীজ পেয়েছিলাম। পরে নিজেদের উদ্যোগে আরো ৬০ কেজি বীজ সংগ্রহ করে চাষিদের মধ্যে বিনামূল্যে সরবরাহ করি। খুলনার উপকূলীয় দাকোপ ছাড়া বাকি আট উপজেলায় প্রথমবারের মত পরীক্ষামূলকভাবে বঙ্গবন্ধু জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে রূপসা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ১২ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে এ জাতের ধান। এ ছাড়া রূপসা উপজেলার নৈহাটি ইউনিয়নের জাবুসা গ্রামের ১৫ কৃষক সম্মিলিতভাবে জমিতে সবুজ ও বেগুনি রঙের সংমিশ্রণে তৈরি করেছে দেশের মানচিত্র। মানচিত্রের ভেতরে রয়েছে সবুজ রংয়ের ‘বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০’ জাতের ধানের চারা। পাশে ব্যবহার করা হয়েছে বেগুনি রঙের ধানের চারা। বেড়ে ওঠা দুই রঙের ধানের চারায় সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের প্রতিকৃতি। যার ভেতরে লেখা আছে, ‘মুজিব শতবর্ষ বঙ্গবন্ধু ধান ১০০’। যা সাড়া ফেলেছে। জাবুসা গ্রামের চাষি সুলতানুর রহমান মুলতান জানান, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি জমি প্রস্তুত করে নতুন জাতের বীজ বপন করেছেন। কম সময়ে ভালো চারা পাওয়ার পর তা জমিতে রোপণ করেছেন। ধানের চারা বেশ বেড়ে উঠেছে। কয়েকজন চাষি বলেন, সবুজ ধানের মধ্যে আলাদা বেগুনি ধান রোপণ করে বাংলাদেশের বিশাল মানচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ফলে অন্য অঞ্চলের চাষিরা ধানের খেত দেখতে আসছে। চাষিদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক অভিভাবকও তাদের সন্তানদের নিয়ে ধান খেতে মানচিত্র দেখতে আসছে। কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান বলেন, একজন চাষিকে ৫ কেজি বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। ফলন ভালো হবে বলে আশা করছি। এ ধান শুধু খাদ্যের চাহিদা নয়, পুষ্টির অভাব পূরণেও ভূমিকা রাখবে। খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, উচ্চ জিংক ও পুষ্টিসমৃদ্ধ এ জাতের ধান সোনালি রঙের নাজিরশাইল বা জিরা ধানের দানার মতো। হাইব্রিড ধানের উৎপাদন খরচ বেশি হলেও ‘বঙ্গবন্ধু ধান-১০০’ উফশী জাতের হওয়ায় ধানের উৎপাদন খরচ কম। এটি বোরো মৌসুমের জাত। ব্রি ২৮ ও ২৯ ধান উৎপাদনে ১৫৫-১৬০ দিন সময় লাগে। সেখানে ‘বঙ্গবন্ধু ধান-১০০’ কৃষক ঘরে নিতে পারবে ১৪৫-১৪৮ দিনের মধ্যে। বীজতলায় ৩৫ দিন বয়স থেকে এ জাতের চারা রোপণ করা যায়। ১৪৮ দিনের মধ্যে ফসল কাটার মত উপযুক্ত হয়ে উঠে। বিআর-৭৪ ও বিআর-৮৪’র চেয়ে এর ফলন বেশি। উপযুক্ত পরিচর্যা ও অনুকূল পরিবেশে প্রতি হেক্টরে ৮.৮ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। পূর্ণ বয়স্ক ধান গাছের উচ্চতা ১০১ সেন্টিমিটার। চালের গুণগত মান অত্যন্ত ভালো এবং ভাত ঝরঝরে। এ ছাড়া এ ধান খাদ্যের চাহিদা ও পুষ্টির অভাব পূরণে ভূমিকা রাখবে। কৃষি অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট যে ধানগুলো রিলিজ করে সেটা বিভিন্ন সংখ্যা দিয়ে নামকরণ করে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর নামে ‘বঙ্গবন্ধু ধান-১০০’ উৎসর্গ করা হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ধরে রাখতে ও পুষ্টিকর এই ধানটির প্রতি আগ্রহ বাড়াতে বাংলাদেশের মানচিত্রের মধ্যে রোপণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।তিনি বলেন, এ জাতের ধানকে জনপ্রিয় করার লক্ষে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক আবাদ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ধানের বৃদ্ধি অনেক ভালো। দ্রুত জনপ্রিয়তা পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।