তিন দিনের ছুটিতে দেশের পর্যটন যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে কোলাহলময় যান্ত্রিক জীবন থেকে একটু বিনোদনের আশায় শহর ছেড়েছেন লাখো মানুষ। এছাড়াও একজেলা থেকে অন্য জেলায়ও ভ্রমণ পিপাসুদের আগমন ঘটেছে। এর ব্যতিক্রম ঘটেনি দেশের অন্যতম পর্যটন শহর শ্রীমঙ্গলেও। শ্রীমঙ্গলের উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্পটগুলো গত তিন দিন ছিল উপচেপড়া ভিড়। পর্যটক, দর্শনার্থীতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এখানকার হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ ও বাংলোগুলো। করোনা পরবর্তি সময়ে এমন পর্যটক সমাগমে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও খুশি। ধারণা করা হচ্ছে, গত তিন দিনের ছুটিতে শ্রীমঙ্গলে প্রায় ১০ হাজার পর্যটক, দর্শনার্থী, ভ্রমণ পিপাসুদের আগমন ঘটেছে। এর মধ্যে বিদেশি পর্যটকও রয়েছেন।
দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটকের পদচারনায় শ্রীমঙ্গল মুখর ছিল গত তিন দিন। পাখির অভয়ারণ্য বাইক্কা বিল, চা-বাগান, চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, বধ্যভূমি ৭১, বন্যপ্রাণী সেবা ফাউ-েশন, লাল টিলা, চা-কণ্যা ভাস্কর্য, মণিপুরী পাড়া, খাসিয়া পুঞ্জিসহ পর্যটন স্পটগুলো হাজারো পর্যটকের ভিড়ে ছিল মুখরিত। এছাড়াও কমলগঞ্জের মাধবপুর লেক, লাউয়াছড়া জাতীয় পার্কে পর্যটকে ছিল ভরপুর।
স্থানীয় বৃষ্টি বিলাশ গেষ্ট হাউজের স্বত্বাধিকারী আনজিম ইসলাম রাফি জানান, তাদের রিসোর্টে কোনো রুম ফাঁকা ছিল না। সব কটি রুম অগ্রিম বুকিং হয়ে যায়। অরণ্যের দিন রাত্রি ইকো-কটেজের স্বত্বাধিকারী কুমকুম হাবিবা জানান, গত ৩ দিন তাদের দুটি ইকো-কটেজের সব রুমই অগ্রিম বুকিং হয়ে যায়। এদিকে বালিশিরা রিসোর্টের চেয়ারম্যান মো: শহিদুল হক জানান, তাদের রিসোর্টের সব কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে যায়। সব কক্ষই ছিল পর্যটকে ভরপুর।
দেশে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় চা-বাগান অন্যতম। তাই এবারের ছুটিতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। চা-বাগান আর তার অপরুপ সৌন্দর্য অবলোকন করতে হাজার হাজার পর্যটক এবারও শ্রীমঙ্গল এসেছেন। শ্রীমঙ্গল শহর এবং রিসোর্ট পল্লী খ্যাত রাধানগরের সব রিসোর্টই অগ্রিম বুকিং হয়ে যায়। তাই থাকার জায়গা খুঁজতে গিয়ে বিপাকে পরতে হয়েছে অনেককে। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমনে নিরাপত্তা ও নজরদারী বাড়িয়ে তৎপর ছিল পর্যটন পুলিশ।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের ওয়াইল্ড লাইফ রেঞ্জার মোঃ শহীদুল ইসলাম জানান, গত ১৮ ও ১৯ মার্চ ২ দিনে শুধু লাউয়াছড়া জাতীয় পার্কেই ২ হাজার ৫৯৭ জন পর্যটকের আগমন ঘটেছে। যা থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৮৭৪ টাকা। এর মধ্যে বিদেশী ছিল ১০ জন। গাড়ি পার্কিং হয়েছে ১৬৬ টি। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গলের প্রতিটি পর্যটন স্পটই ছিল লোকে লোকারণ্য। এদিকে শহরের হোটেল রেস্তোরাগুলো ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ।
দেশের সবচেয়ে বেশি চা-বাগান সমৃদ্ধ শ্রীমঙ্গল বেড়াতে এসে অনেকেই চলে গেছেন এখানকার নৃ-তাত্তিক জনগোষ্ঠির পাড়াগুলোতে। ত্রিপুরা, মণিপুরি, সাওঁতালসহ বেশ কয়েকটি পাড়া ঘুরে তাদের বিচিত্র জীবনধারা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি দেখে মুগ্ধ হয়েছেন আগত পর্যটক, দর্শনার্থীরা।