নীলফামারী সদরের চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের চৌরঙ্গী বাজারের নতিবাড়ি গ্রামে মিলেছে বাঘের একাধিক পায়ের ছাপ। ১৮ মার্চ ওই ইউনিয়নের দলবাড়ি গ্রামে মুরগির খামারে পেতে রাখা বৈদ্যুতিক ফাঁদে বিদ্যুতায়িত হয়ে একটি চিতাবাঘ মারা যায়। এ সময় ওই মৃত বাঘের আরও এক সঙ্গীকে খামার সংলগ্ন ভুট্টা ক্ষেতে প্রবেশ করতে দেখতে পায় গ্রামবাসী।
১৯ মার্চ দুপুরে রাজশাহী ও ঢাকা থেকে আসা বন বিভাগের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট এবং রংপুর বন বিভাগের বন্য প্রাণী সরক্ষণ ইউনিট দলবাড়ি গ্রামে ওই বাঘটি খুঁজতে গিয়ে গ্রাম থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নতিবাড়ি চৌরঙ্গী বাজার গ্রামে বাঘের পায়ের একাধিক ছাপের সন্ধান পায়। তবে এখনো সঙ্গী বাঘের হদিস মেলেনি বলে জানিয়েছেন রংপুর বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সিংহ।
এদিকে বাঘের একাধিক পায়ের ছাপের সন্ধান মেলায় চওড়া বড়গাছা ও গোড়গ্রাম ইউনিয়নের প্রায় ছয়টি গ্রামের মানুষের মাঝে বাঘ আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে খামার এলাকাসহ আশপাশে বনবিভাগের পক্ষ থেকে লাল পতাকা নিশান দিয়ে মানুষের চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এ সময় দলবাড়ি, বাঘপাড়া, ডারিরপাড়, ধোবাডাঙ্গা, তীলবাড়ি ডাঙ্গা, কাঞ্চনপাড়া, হিন্দুপাড়া ঘুরে দেখা গেছে এসব গ্রামের কয়েকজন নারী-পুরষ বাড়ির বাইরে থাকলেও অনেকেই রয়েছে বাড়িতে। যে কয়েকজন বাড়ির বাহিরে ছিলেন তাদের সবার চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ।
সঙ্গী বাঘটির অবস্থান জানতে গ্রামে কাজ শুরু করেছে রাজশাহী ও ঢাকা থেকে আসা বন বিভাগের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট এবং রংপুর বন বিভাগের বন্য প্রাণী সরক্ষণ ইউনিটের কর্মকর্তাগণ।
দলবাড়ি গ্রামের শাহিনুর আলম (৪০) বলেন, ‘হঠাৎ করে গ্রামে একটি বাঘের মৃত্যু এবং আরো একটি জীবিত বাঘ এলাকায় থাকায় অনেক ভয়ে আছি। গ্রামে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে চরম আতঙ্কে দিন কাটছে আমাদের। বাচ্চাদের ঘরের বাইরের বের হইতে বাঁধা দিচ্ছি। তারা বাঁধা মানতে চায় না।’
রংপুর বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সিংহ বলেন,‘আমরা শুক্রবার দুপুর থেকে গ্রামটিতে অবস্থান করছি। শনিবার রাজশাহী ও ঢাকা থেকে বন বিভাগের বন্য প্রাণী অপরাধ দমনের দু’টি ইউনিট আমাদের সাথে যোগ দিয়েছে। আমরা দলপাড়া গ্রামসহ আশপাশের এলাকায় সন্ধান চালাচ্ছি বাঘটির অবস্থান নিশ্চিত হতে। এখন পর্যন্ত বাঘের সন্ধান পাওয়া না গেলেও ঘটনাস্থল দলবাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নতিবাড়ি চৌরঙ্গী এলাকায় বাঘের পায়ের একাধিক ছাপ দেখতে পেয়েছি। এসব পায়ের ছাপ দেখে মনে হচ্ছে ভোরের দিকে এখানে বাঘের আনাগোনা ঘটেছে। এ এলাকায় একটি কিংবা একাধিক বাঘ থাকতে পারে বলে ধারণা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন,‘আসলে সন্ধ্যার পর কিংবা রাতের বেলায় ওরা (চিতাবাঘ) বাহিরে বিচরণে আসে। আমরা প্রস্তুত রয়েছি, যদি বাঘের দেখা মেলে তবে নিরাপদে সেটি উদ্ধার করবো আমরা।’
তিনি আরও বলেন, “যে চিতা বাঘটি মারা গেছে আমরা ধারণা করছি সেটি ভারতীয় সীমানা থেকে এসেছে। এই অঞ্চলেও চিতা বাঘ দেখা যেত আগে, কিন্তু আমাদের এই অঞ্চলে বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় এখন আর বাঘ দেখতে পারছি না আমরা। এলাকাবাসীর মাধ্যমে জানতে পেরেছি এই
গ্রাম থেকে ভারতীয় সীমান্তের দূরত্ব প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার। তাতেই অনুমান করা যায় ভারতের কোন জঙ্গল থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাঘ বাংলাদেশের এই গ্রামে এসেছে।
নীলফামারী জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোনায়েম খান বলেন,‘ নীলফামারী সদর থানায় একটি জিডি করা পর নীলফামারী প্রাণী সম্পাদ হাসপাতালে মৃত বাঘটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। লুকিয়ে থাকা বাঘ জীবিত অবস্থায় ধরতে কাজ করছে ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর থেকে আসা বন বিভাগের তিনটি ইউনিট।’
মুরগির খামারী ওলিয়ার রহমান বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে আমার খামারে মুরগির মাথা-পা ছিড়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। আমি ভেবেছিলাম খামারের পেছনে বাঁশঝাড় ও ভুট্টা ক্ষেত থাকায় সেদিক দিয়ে শেয়াল বা বনবিড়াল এসে মুরগি নিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে গেল দু’সপ্তাহ আগে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরী করে বৃহস্পতিবার রাতে পেতে রাখি। শুক্রবার সকালে দেখতে পাই ফাঁদে আটকা পড়ে মরে আছে একটি চিতাবাঘ। এ সময় আরেকটি বাঘের গর্জন শুনতে পাওয়া যায়।