দেশের বহুল আলোচিত দুই হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিং মামলার চার্জ গঠনের শুনানী আগামী ১৭ এপ্রিল নির্ধারণ করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার এর শুনানী ছিলো ঢাকা মহানগরের বিশেষ জজ আদালত-১০ এ। সেখানে হাজির ছিলেন ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছোট ভাই খন্দকার মোহ্তেশাম হোসেন বাবরসহ আট জন আসামী। এ মামলার ১০ আসামীর মধ্যে দুইজন পালাতক রয়েছেন। ওই আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইজীবী মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, আদালতের বিচারক মো. নজরুল ইসলাম মামলাটির (বৃহস্পতিবার) আদালত আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষে বক্তব্য শুনেছেন।
এক সময়ে ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের রাজীতির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক ছিলেন যারা, তাদের কেউই শেষ পর্যন্ত রেহাই পায়নি। আইনের আওতায় আসতে হয়েছে একে একে সকলকেই। সর্বশেষ গত ৭মার্চ রাতে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছোট ভাই খন্দকার মোহ্তেশাম হোসেন বাবর গ্রেফতার হওয়ার মধ্য দিয়ে দুর্নীতিবাজ এই চক্রের শেষ উইকেটের পতন ঘটে।
২০২০ সালের ৭জুন ফরিদপুরে পুলিশের বিশেষ অভিযানে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ক্ষমতার বলয়ের কেন্দ্রে যারা ছিলেন তাদের প্রথম সারির কজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরই সূত্র ধরে বাবরসহ মোশাররফ এর প্রভাব বলয় থাকা নেতাদের নামে সিআইডি অর্থ পাচারের মামলা দায়ের করে। বাবরের প্রথমদিকের সহযোগীরাও পার পায়নি। তার প্রধান সহযোগি ছিলেন ততকালীন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এপিএস সত্যজিৎ মূখার্জি ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মোকাররম মিয়া বাবু।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে ২০১৬ সালের ২৯ জুন সত্যজিৎ ও ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল মোকাররম দুজনই আটকে পড়েছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের জালে। দুজনের বিরুদ্ধেই মামলা করে দুদক। এর মধ্যে দুদকের মামলায় সত্যজিৎ মুখার্জির সাত বছরের কারাদ- হয়েছে। মোকাররম বাবুর বিরুদ্ধে করা মামলার বিচারকাজ চলমান রয়েছে। সত্যজিৎ ও মোকাররম বাবুকে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যাবহারের অভিযোগে ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল দলীয় পদ থেকে বহিস্কার করা হয়। বর্তমানে তারা দুজনেই জামিনে রয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানাযায়, ২০২০ সালের ২৬ জুন বাবর সহ একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে সিআইডি বাদী হয়ে রাজধানী ঢাকার কাফরুল থানায় মানি লন্ডারিং এর মামলা দায়ের করে। মামলার তদন্ত শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় গত বছরের ৩ মার্চ বাবর সহ ১০ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস।ওই মামলায় পলাতক ছিলেন বাবর। তার নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী হয়েছিল।
এ মামলায় ১০ জন আসামীর মধ্যে ৮জন গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতার হওয়া আসামিরা হলেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার মোহ্তেশাম হোসেন বাবর, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক (বহিস্কৃত) সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ছোট ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি (বহিস্কৃত) মো: ইমতিয়াজ হাসান রুবেল, সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রীর এপিএস এএইচএম ফোয়াদ, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি খন্দকার নাজমুল ইসলাম লেভী, যুবলীগ নেতা আসিবুর রহমান ফারহান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ফাহিম ও যুবলীগ নেতা কামরুল হাসান ডেভিড। পলাতক রয়েছেন মোহাম্মদ আলী মিনার ও তারিকুল ইসলাম নাসিম। শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি খন্দকার নাজমুল ইসলাম লেভী, যুবলীগ নেতা আসিবুর রহমান ফারহান বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
এই মামলায় আদালতে হাজির হওয়া আট আসামীর সকলেই একসময় ছিলেন ফরিদপুরে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির নিয়ন্তা। তাদের ইশারাতেই নিয়ন্ত্রিত হতো ফরিদপুরের প্রশাসন ও সকল সরকারি দপ্তর। এদের কারো কারো ছিলো নিজস্ব বাহিনীও ছিল। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নিরভর করতো দলের অঙ্গ সংগঠনে কে কোন পদ পাবেন।
এপ্রসঙ্গে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদ হোসেন সমকালকে বলেন, সেই ২০০৯ সাল থেকে যারাই ফরিদপুরে ক্ষমতার অপব্যাবহার করেছেন, তারা শেষ পর্যন্ত পার পাননি, এটা আশার কথা। দেশে সুশাসন আছে বলেই সাবেক মন্ত্রীর ক্ষমতা খাটিয়ে অন্যায় করেছে যারা, সেই সত্যজিৎ- মোকাররম থেকে শুরু করে সর্বশেষ খন্দকার বাবর পর্যন্ত সকলেই বিভিন্ন মামলায় আইনের আওতায় এসেছে। তবে এদের আরো আগেই নিয়ন্ত্রন করা গেলে দলের কম ক্ষতি হত।