সারাদেশের মতো শনিবার (২৬ মার্চ) রাজশাহীতেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন করা হয়েছে। বাঙালি জাতির ইতিহাসের এই স্মরণীয় দিনটিতে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাজশাহীর সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জেলা পুলিশ লাইন্স মাঠে ৩১ বার তোপধ্বনি ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরের শহিদ স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অপর্ণের মাধ্যমে ৫১তম মহান স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।
দিবসটিতে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ্ এনডিসি সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরের শহিদ স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও সংস্থা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আলাদাভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহিদদের শ্রদ্ধা জানান। এরপর সকাল ৮টায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ্ এনডিসি জাতীয় সংগীত পরিবেশনার সাথে সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পরে তিনি স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে বেলা ১১টায় রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের উন্নয়ন শীর্ষক আলোচনাসভা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে গোটা বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্খায় উজ্জীবিত করেছিলেন। তাঁর ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজী রেখে রক্তের বিনিময়ে এদেশকে স্বাধীন করেছিলেন। আর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে গ্রেপ্তারের পূর্ব মুহূর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বঞ্চনা, অন্যায়, অবিচার, সাম্প্রদায়িকতা, বৈষম্য ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাই ২৬ মার্চ বাঙালি জাতির জন্য অহংকার ও শৃঙ্খল মুক্তির দিন, বিশে^র বুকে লাল সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন। সোনার বাংলা বিনির্মাণে উজ্জীবিত হওয়ার দিন।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বৈশি^ক অতিমারি করোনার মধ্যেও আমাদের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশে^র দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল। মহান স্বাধীনতার ৫১তম বছর পেরিয়ে ৫২তম বছরে এসে আমরা বেশ কিছু গৌরবময় সাফল্য অর্জন করেছি। আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, শতভাগ বিদ্যুতায়নের দেশে পদার্পণ করেছি, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণসহ দেশের প্রতিটি সেক্টরে সাফল্য অর্জন করেছি।
অনুষ্ঠানে দিবসটির আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আবদুল হাদী ও জিন্নাতুন নেসা তালুকদার। রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবদুল জলিলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আবদুল বাতেন বিপিএম, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক ও পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার)। সভায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনাসভা শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন তথ্যবিবরণী।
আর মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শনিবার বিকেলে নগরীতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালি বের করা হয়। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত র্যালিটি কুমারপাড়াস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় সেখানে গিয়ে পথসভার মাধ্যমে শেষ হয়। র্যালিতে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার সহ নগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি দিবসটি উপলক্ষে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ, রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (রামেবি), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (রুয়েট), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), সোনালী ব্যাংক, আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ সংগঠন সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করা হয়।