লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত ৪৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় বিএনপির উপজেলা কার্যালয় ও কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। শনিবার সকাল সাড়ে ৬টায় এবং সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলা সদর আলেকজান্ডার বাজার মসজিদ ও রহমানিয়া মার্কেট এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন ও পৌর কাউন্সিলর দিদারুল ইসলাম খন্দকারকে আটক করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা উপজেলা পরিষদ এলাকায় থেকে মৌন মিছিল নিয়ে আলেকজান্ডার বাজারের রহমানিয়া মার্কেট এলাকায় পৌছলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মুখোমুখি হলে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা বিএনপি কার্যালয় ও আসবাবপত্র চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। দুপক্ষের সহিংসতায় অন্তত ৪০-৪৫ জন আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরকে দায়ি করছেন।
উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শিবলী নোমান বলেন, চর বাদাম ও আলেকজান্ডার ইউনিয়নের বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা উপজেলা পরিষদ এলাকায় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক দেওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন। প্রতিমধ্যে আলেকজান্ডার বাজার জামে মসজিদ এলাকায় পৌছলে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে আওয়ামী লীগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অতর্কিতে হামলা চালায়।
পরে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা উপজেলা পরিষদ এলাকায় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক দেওয়ার কর্মসূচি শেষ করে একটি মৌন মিছিল করে আলেকজান্ডার বাজারের রহমানিয়া মার্কেট এলাকায় পৌছলে আবারও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা বিএনপির দলীয় অফিস ভাঙচুর করে এবং অফিসের আসবাবপত্র চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। এ সময় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন, হাছান, ফরহাদ, ইজাজ, আমজাদসহ ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের মধ্যে ৪ জনকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং অন্যান্যদেরকে স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন হেলাল বলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উপজেলা পরিষদ এলাকায় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক দেওয়ার পর আলোচনা সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে দলীয় কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের একটি মিছিলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অশালীন কথা বলে মিছিল করছিল। মিছিলটি আলেকজান্ডার রহমানিয়া মার্কেট এলাকায় এসে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায় এবং বাজারের দোকান ঘরের সার্টার ভাঙচুর করে। এ সময় তাদের হামলায় উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ মো. রাকিব, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আকবর হোসেন সুখি এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ ১৫ জন আহত হন। বিএনপির অফিস ভাঙচুরের ঘটনা অস্বীকার করে হেলাল বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা নিজেদের অফিস ভাঙচুর করে আমাদের উপর দায় চাপাচ্ছে।
রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর বলেন, উপজেলা সদর আলেকজান্ডার বাজারে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন ও পৌর কাউন্সিলর দিদারুল ইসলাম খন্দকারকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে আসে। তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। তাদেরকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে। এলাকায় পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে ওসি জানান।