বিএনপির প্রধান নেতা দন্ডিত আসামি। দলের ভাইস চেয়ারম্যান পলাতক আসামি। নির্বাচনকে সামনে রেখে কার নেতৃত্বে ক্ষমতায় যাবে বিএনপির সেই নেতা নেই। এই প্রশ্নের জবাব বিএনপির কাছে নেই। এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তাদের নেতারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অসত্য বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি এ কথা বলেন। এ সময় দলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের আওয়ামী লীগের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তিনি দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনা দেন। বিএনপির নেতৃত্বের সমালোচনা করে সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতৃত্ব আজকে বিভক্ত। তাঁদের নিজেদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। দলে গণতন্ত্র নেই। অথচ তাঁরা গণতন্ত্রের কথা বলে মুখে ফেনা তুলছে। বাংলাদেশের মানুষ আর বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। কারণ মানুষ জানে, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এ দেশের উন্নয়ন সম্ভাবনা ধ্বংস হয়ে যাবে। গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস হয়ে যাবে। রক্তে রক্তে সমস্ত বাংলাদেশ রক্তের নদী হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, দুঃসময়ের ত্যাগী নেতারাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের মূল শক্তি। আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হলে দুঃসময়ের কর্মীদের বাঁচাতে হবে। দুঃসময়ের কর্মীদের উপেক্ষা করলে আওয়ামী লীগ টিকতে পারবে না। যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁদের মনে রাখতে হবে, দুঃসময়ের ত্যাগী কর্মীদের কোণঠাসা করে সুসময়ের বসেন্তর কোকিলদের নেতৃত্ব দিলে সংগঠন চলবে না। নেতৃত্ব নির্বাচনের সময় কে কাকে পছন্দ করে, কার মুখ চেনা- এসব দেখলে চলবে না। ত্যাগী নেতাকর্মীরা যত দিন নেতৃত্বে থাকবে ততদিন কোনো রাজনৈতিক শক্তিই আওয়ামী লীগকে পরাজিত করতে পারবে না।
মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশে আন্দোলন সংগ্রাম করে দীর্ঘ ১৩ বছর একাধারে ক্ষমতায় আছে। মনে রাখতে হবে এর আগে কোথায় চলে গিয়ছিলো বাংলাদেশ। এই ১৩ বছর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প আজকে প্রশংসিত। বিশ্বের নামিদামি দেশগুলো আজকে শেখ হাসিনার সততার, তাঁর পরিশ্রমের, সাহসী নেতৃত্বের প্রশংসা করছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে এই উন্নয়ন সম্ভাবনা বন্ধ হয়ে যাবে।
এর আগে আনুষ্ঠানিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুর রহমান। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুল মালেক। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সঞ্চালনায় সম্মেলনে অন্যান্যের বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, শহীদুজ্জমান সরকার এমপি. ছলিম উদ্দিন তরফতার এমপি, আনোয়ার হোসেন হেলাল এমপিসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নে বিএনপির নেতারা আজকে ঈর্ষানিত। তাঁরা দেশের উন্নয়ন সহ্য করতে না পেরে বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে তাঁরা আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে বিএনপি কোনো
দিনই এ দেশের মানুষের ভালো চায়নি, এখনো নেই। আওয়ামী লীগ জনগণের উন্নয়ন করে, আর বিএনপি কেবল লুটতরাজ করে। লুটতরাজ করতেই তাঁরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি'র বক্তব্য হল খালি কলসি বেশি বাজার মত। যারা জামিন নেয়ার জন্য পুরুষ হয়েও মহিলাদের বোরকা পড়ে হাইকোর্টে হাজির হয় তারা নাকি সরকার পতন ঘটাবে। আমরা গত কয়েক বছর আগে দেখেছি বিএনপি নেতারা বোরকা পরে হাইকোর্টের জামিন নিতে গিয়েছিল। এই লজ্জা বিএনপি কোথায় রাখবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপি বলে বেড়াাচ্ছে নিরপেক্ষ সরকার না হলে তারা নির্বাচনে আসবে না। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী আর কোন তত্তাবোধক সরকার হবে না। নির্বাচন সরকারের অধীনে হয় না। নির্বাচন হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে। নির্বাচন কমিশনার স্বাধীন। সুতরাং স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না সেটি তাদের বিষয়।
হাছান মাহমুদ আরও বলেন, নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে নাই। তারা অংশগ্রহণ না করে ভেবেছিল ধাক্কা দিয়ে সরকার ফেলে দিবেন। বরং সরকার আরো শক্তিশালী হয়েছিল। ২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। আমাদের সরকার অত্যন্ত সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তাই আগামী নির্বাচনের ট্রেনে উঠবে কি উঠবে না সেটি বিএনপির সিদ্ধান্তের ব্যাপার। নির্বাচনের ট্রেন কারো জন্য অপেক্ষা করবে না।
২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হয়েছিল। ওই সম্মেলনে মো. আবদুল মালেককে সভাপতি ও সাধন চন্দ্র মজুমদারকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর প্রায় দুই বছর পর ২০১৬ সালে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
পরে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনের পূনরায় মো. আবদুল মালেককে সভাপতি ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘোষনা করা হয়।