নারী শিক্ষায় শেরপুরের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের
অংশজুড়ে রয়েছে শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৪৯ সালে শেরপুরে
প্রথম নারী শিক্ষাদানের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় শেরপুর সরকারি বালিকা
বিদ্যালয়। তৎকালে এর নাম ছিল ‘কায়েদে আজম বালিকা বিদ্যালয়’। পরবর্তিতে
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘শেরপুর বালিকা
বিদ্যালয়’। এরপর ১৯৮১ সালে এটি জাতীয়করণ হয়।
শেরপুরের বিশিষ্ট কিছু নাগরিক ও শিক্ষাবিদ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে
শেরপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল মাধবপুর এলাকায় দুই একর ৯৬ শতক জমির উপর এই
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার ৭৩ বছর ধরে নারী শিক্ষা
উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটি শেরপুরের বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে। হাজার হাজার নারী
এই স্কুল থেকে শিক্ষা অর্জন করে কর্মস্থলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
নারী শিক্ষার উন্নয়নে এই প্রতিষ্ঠানটি জেলায় সব সময় শীর্ষ স্থান ধরে
রাখছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবদি স্কুলটি নানা সংকটে ধুঁকছে।
কোনো সরকারের আমলেই এই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কেউ নজর দেয়নি। স্কুলের
শিক্ষার্থীদের দাবি দেশের নারী নেতৃত্ব বিকাশ হলেও জেলায় নারীদের এই
পাঠশালাটির কোনো উন্নয়ন হয়নি। আধুনিকতা দূরের কথা, সাধারণ সুবিধাও এখানে
নেই। উপরন্তু চারদিকে ঝোপঝাড়, ভগ্নদশা ভবন, মজা পুকুরের দূষিত পানি, ময়লা
ও ময়লার ভাগাড় সব মিলিয়ে স্কুলটি এখন মশার রাজ্যে পরিণত হয়েছে।
স্কুলের প্রাক্তন ও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যুগযুগ ধরে তারা শুধু
শুনেই আসছে স্কুলটিতে উন্নয়ন হবে। কিন্তু ৭২ বছরেও কিছুই হয়নি। এ যেন
‘সরকার কা মাল দড়িয়া মে ঢাল’। কয়েকটি পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সের ভগ্নদশা আধাপাকা
ভবন স্কুলের যেমন সৌন্দর্য নষ্ট করছে তেমনি শিক্ষাথীদের মাথার ওপর ঝুঁকি
নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বছরের পর বছর ধরে। বৃষ্টি হলে আধা পাঁকা বিল্ডিং এর
ফুটো টিন দিয়ে পানি পড়ে অঝোরে। বছর পনেরো আগে নামমাত্র একটি ভবন হলেও
দরজা জানালা ঠিক নেই। বিল্ডিংয়ের এখানে ওখানে পলেস্তারা খসে পড়ে ভেঙে
আছে। নির্মাণকালীনই কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও কিছুই হয়নি।
স্কুলের পাশেই রয়েছে একটি বিশাল মজা পুকুর, চারদিকে ঝোপঝাড়, নোংরা
পরিবেশ, ময়লার ভাগাড় যেন মশা-মাছি উৎপাদের চারণ ক্ষেত্র। মশা-মাছির
অত্যাচারে অতিষ্ঠ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ক্লাস রুম তো দূরের কথা মশার
অত্যাচরে দিনের বেলায় স্কুল ময়দানে দাঁড়িয়ে থাকারও উপায় নেই। আর বিকাল হলে
স্কুলের ভিতর কোটি কোটি মশার গুনগুন শব্দ আর কামড়ে এক অসহ্য পরিবেশ
সৃষ্টি হয়। স্কুলটি যেন মশার দখলে। প্রতি মাসে কয়েকশ’ কয়েল জ¦ালিয়ে চলে
শিক্ষা কার্যক্রম।
মশার অত্যাচারের সঙ্গে রয়েছে প্রায় ১২শ’ শিক্ষার্থীর বাথরুম বিড়ম্বনা।
এতসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য ১২টি টয়লেট থাকলেও কোনো রকম ব্যবহারের জন্য
রয়েছে মাত্র দুটি টয়লেট। বাকিগুলো পরিত্যক্ত। উঠতি বয়সি এই নারী
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যকর টয়লেট থাকার সরকারি বাধ্য বাধকতা থাকলেও তা
কোনোকালেই হয়নি।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের ভোটের জন্য
সুবিধামতো স্কুল-কলেজ করেন এবং নানা উন্নয়ন কাজ করেন। কিন্তু সরকারি এই
প্রতিষ্ঠানটি যুগযুগ ধরে এভাবে পড়ে আছে কারও কোনো মাথাব্যথাই নেই।
স্কুলে সমস্যার পাহাড় স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক অ্যানি সুরাইয়া মিলোজ
বলেছেন, বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আশা করি এখানের নারী
শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিবে।
স্কুলের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশীদ বলেন, গুরুত্ব বিবেচনায়
নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিখ্যাত এই প্রতিষ্ঠানের সমস্যা অচিরেই সমাধান
করা হবে। মশা তাড়ানোর বিষয়টি পৌরসভা ও স্কুল কর্তৃপক্ষ দেখবেন। দশ তলার
একটি আধুনিক স্থাপনা এখানে হবে। এই স্থাপনা হলেই শেরপুরের মানুষ অনন্য
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্কুলটিকে দেখতে পাবে।