গেল মাস জুড়েই অস্থির মসুর ডালের বাজার। তবে গত কয়েকদিনে কিছুতেই টানা যাচ্ছে না এ পণ্যটির লাগাম। এ সময়ের মধ্যে মসুরের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর বৃদ্ধি ও স্টক ব্যবসায়ীরা দেশী মসুর মজুদ করায় মৌসুমেও পণ্যটির দাম রয়েছে বাড়তির দিকে। পাশাপাশি বেড়েছে খেসারি ও ছোলার দাম। সৈয়দপুরের বৃহৎ পাইকারী বাজারের দোকানগুলোয় মানভেদে প্রতি কেজি দেশী মসুর (চিকন) বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। গত সপ্তাহে বাজারে পণ্যটির দাম ছিল ১১৮ থেকে ১২০ টাকা। সে হিসাবে ৬ দিনের ব্যবধানে পাইকারিতে দেশী মসুর ডালের দাম বেড়েছে কেজিতে সর্বোচ্চ ১২ টাকা। একই সময়ের ব্যবধানে নেপালি মসুরের দামও কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বুদ্ধি পেয়েছে। জানা যায়, গত সপ্তাহের শেষের দিকে পাইকারিতে প্রতি কেজি নেপালি মসুর ডাল বিক্রি হয়েছিল ৭০ টাকায়। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। পাইকারি ডাল ব্যবসায়ী অনেকেই জানান, দু-তিন মাস ধরে মসুরের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে চলতি সপ্তাহে পণ্যটির দাম সর্বোচ্চ বেড়েছে। গত চার কর্মদিবসে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ টাকা করে বেড়ে বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি ও নেপালি মসুর ডালের দাম বেড়েছে। আন্তজার্তিক বাজারে পণ্যটির বুকিং দর বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশেও মসুরের দাম বাড়তির দিকে। তারা জানান প্রতি বছর এ সময়ে মসুরসহ অন্যান্য ডালের বাজার নিম্নমুখী থাকে। কিন্তু এ বছর আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবে দু-তিন মাস ধরে মসুরের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। এমনকি নুতন মৌসুমের দেশী মসুর ডাল বাজারে আসার পরও পণ্যটির দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং দীর্ঘদিন বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় মোকামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা দেশী মসুরের মজুদ বাড়াচ্ছেন। এতে ভরা মৌসুমেও দেশী মসুরের দাম না কমে উল্টো বাড়ছে। তিনি আরো বলেন, মানের দিক বিবেচনায় দেশীর পরই নেপালি মসুরের স্থান। অপরদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বমুখী থাকায় দেশীয় বাজারে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডিয়ান মসুর। অস্ট্রেলিয়ার মসুর বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৮৫ থেকে ৮৭ টাকায়। ৬ দিনে প্রায় ১৫ টাকা বেড়ে একই মানের অস্ট্রেলিয়ার মসুর ১০০ থেকে ১০৫ টাকা মাঝারি মানের (লোকাল মিলিং) মসুর বিক্রি হয়েছে ৯২ থেকে ৯৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। অন্যদিকে কানাডা থেকে আমদানিকৃত মসুর বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। ৬ দিন আগে এর দাম ছিল ৭৮ থেকে ৯৫ টাকায়। কানাডার (লোকাল মিলিং) গত সপ্তাহের শেষে বিক্রি হয়েছে ৭৫ টাকায়। বর্তমানে একই পরিমাণ পণ্য ৮৫ থেকে ৮৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে দাম বেড়েছে মুড়ি ও ছোলার। রমজান মাসে সাধারণত মুড়ি ও ছোলার চাহিদা বেড়ে যায়। তাই ব্যবসায়িরা এগুলোর দাম বাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে বাজারে নামকা দেশী মুড়ি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। যা কয়েকদিন পুর্বে ছিল ৬০ টাকা। এদিকে ছোলার কেজি ছিল ৬০ টাকা। যা এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ টাকা। কোন কোন ব্যবসায়ি ৮০ টাকাও বিক্রি করছেন। খেসারির কেজি ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। যা এখন কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা।
দাম বেড়েছে কলার হালির। দুইদিন পুর্বে এক হালি কলা মালভোক বিক্রি হয়েছে ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা। আর রমজান শুরু হলেই কলার হালি হলো ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা। দাম আরও বাড়বে বলে জানালেন ব্যবসায়িরা।
দাম বেড়েছে খেজুর,আঙ্গুর,আপেল,কমলা,মালটা ও পেয়ারার। সাধারণত রমজান মাসে রোজাদাররা ফলমুল একটু বেশী পছন্দ করে। তাই ইফতারের সময় ফলমুল প্রয়োজন হয়। আর এ পণ্যগুলোর দাম বাড়তি হাঁকায় অসাধু কতিপয় ব্যবসায়ি।
সৈয়দপুর বনিক সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলি জানান,সাধারণত রমজান মাসে প্রত্যেকটি পণ্যের দাম কিছুটা বাড়ে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আসক ফাউন্ডেশন সৈয়দপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুস সবুর আলম জানান,যারা পবিত্র রমজান মাসে ইচ্ছাকৃত পণ্যের দাম বাড়ায় তাদের আইনের আওতায় এনে সাজা দেয়া উচিৎ। আর এজন্য বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা প্রয়োজন। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় পণ্যের দাম ইচ্ছেমত নিচ্ছে ব্যবসায়িরা।