রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় বহুল আলোচিত ধানের জমিতে পানি না পাওয়ায় দুই আদিবাসী কৃষকের আত্মহননের ঘটনায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছে। দাখিলকৃত প্রতিবেদনে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের অপারেটরের বিরুদ্ধে বেশকিছু অনিয়ম উল্লেখ করা হলেও দুই কৃষকের আত্মহত্যার বিষয়ে কিছু লেখা হয়নি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলামের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে তদন্ত কমিটির প্রধান কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং) মো. আবু জুবাইর হোসেন বাবলু জানান, ঘটনার তদন্তকালে বেশকিছু অনিয়ম পেয়েছি। পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে নলকূপ অপারেটর সেখানে কোন রেজিস্ট্রার মেইনটেইন করেনি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তদারকির অভাব ছিল। মূলত এসব বিষয় উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছি। এছাড়াও বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের জিম্মি করে নলকূপ অপারেটররা টাকা নেন বলেও জেনেছি। তবে ওই দুই কৃষক কেন বিষপান করেছিলেন সে বিষয়ে প্রতিবেদনে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। কারণ, এ বিষয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়া সেভাবে বলার সুযোগ নাই। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী-ই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে মৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে করা অভিযোগটি ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কমিটির অপর সদস্য রাজশাহী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, আত্মহত্যা ও সময়মতো পানি না পাওয়ার বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। তবে আত্মহত্যার বিষয়ে ময়না তদন্তসহ মামলার তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আপাতত কিছুই বলতে পারছিনা। তবে এ বিষয়ে ওঠে আসা এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির মতামতগুলো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও ওই গভীর নলকূপের অধীনে ক্যাপাসিটির চেয়েও বেশি জমিতে ধান চাষ করা হচ্ছে বিষয়টি উঠে এসেছে।
এর আগে ধান ক্ষেতে পানি না পাওয়ায় অজুহাতে গত ২৩ মার্চ বিকেলে গোদাগাড়ী উপজেলার ইশ্বরীপুর গ্রামে গভীর নলকূপের পাশে দাঁড়িয়ে বিষপান করেন অভিনাথ মার্ডি (৩৬) এবং তার চাচাতো ভাই নিমঘুটু গ্রামের রবি মার্ডি (২৭)। অভিনাথ সে রাতেই নিজ বাড়িতে মারা যান এবং দুইদিন পর ২৫ মার্চ রাতে হাসপাতালে মারা যান রবি। এ ঘটনায় অভিনাথের স্ত্রী রোজিনা হেমরন বাদি হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনায় অভিযুক্ত করে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের অপারেটর ও ওয়ার্ড কৃষকলীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করে। যে মামলায় গত ৩ এপ্রিল প্রথমপ্রহর রাত ১টার দিকে গোদাগাড়ী উপজেলার চব্বিশনগর এলাকা থেকে সাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত সাখাওয়াত উপজেলার ইশ্বরীপুর গ্রামের মৃত হারুনের ছেলে। গ্রেপ্তারের পর তিনদিনের রিমান্ড আবেদন করে গত রোববার আদালতের মাধ্যমে তাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরপর মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে রিমান্ড শুনানী শেষে একদিনের জন্য জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) ইফতে খায়ের আলম।
এদিকে ঘটনা তদন্তে আলাদা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল বিএমডিএ। সেই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতেই নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াতকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএমডি-এর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ।