নাটোরের বড়াইগ্রামের সরিষাহাটে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিএডিসির খনন করা খালে অবৈধভাবে সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে সব পানি সেঁচে ফেলে দিয়ে মাছ শিকার করছেন প্রভাবশালীরা। এতে খালের সব পানি শুকিয়ে যাওয়ায় আবাদি জমিতে সেচ দেয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় চাষীরা। অপরদিকে, খালে মাছ ধরতে না দেয়ায় স্থানীয় মৎস্যজীবিরাও পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। এ অবস্থায় বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করে খালটি খননের প্রকৃত সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, উপজেলার সরিষাহাট সিঙ্গার বিলের মাঝখান দিয়ে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খাল রয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) উদ্যোগে ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খালটি পুনঃখনন করা হয়।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরিষাহাট গ্রামের খালের দুই প্রান্তে বাঁশ, জাল ও পলিথিন দিয়ে বাঁধ দিয়েছেন ইমান আলী ও হুজুর আলী নামে স্থানীয় দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি। বিভিন্ন স্থানে মোট সাতটি স্যালো মেশিন বসিয়ে খালের সব পানি সেঁচে ফেলে দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের নিয়োজিত লোকজন পানিবিহীন খালে নেমে মাছ ধরছে। এর আগে সপ্তাহ খানেক ধরে প্রথমে বাদাই ও বেড় জাল দিয়ে খালের রুইসহ বড় বড় মাছ ধরে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা। বর্তমানে খালের পানি সেঁেচ মা মাছসহ সব মাছ মেরে নিচ্ছেন তারা। এতে একদিকে যেমন পাড়ের নরম মাটি ভেঙ্গে খালে পড়ছে, অপরদিকে, খালে পানি না থাকায় শুকনো মৌসুমে জমিতে সেঁচ দেয়া নিয়ে চরম বিপদে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা। এ ছাড়া প্রভাব খাটিয়ে কাউকে খালে মাছ ধরতে দিচ্ছে না চক্রটি। এতে বিশেষ করে মৎস্যজীবিরা তাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন।
এ ব্যাপারে সরিষাহাট গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি বিলে পাঁচ বিঘা জমিতে আবাদ করেছি। বর্তমানে শুকনো মৌসুমে ভূ-গর্ভস্থ পানি তেমন উঠছে না। তাই খালের পানিই ছিলো জমিতে সেঁচ দেয়ার একমাত্র ভরসা। কিন্তু ২-৩ জন অর্থলোভী ব্যক্তি গায়ের জোরে খালের সব পানি সেঁচে ফেলে দেয়ায় আবাদ করা নিয়েই চরম বিপাকে পড়েছি।
অপর কৃষক আতাহার আলী জানান, খালে মৎস্যজীবিতো দুরের কথা, গ্রামের সাধারণ লোক বরশী দিয়ে মাছ ধরতে আসলেও এরা তাড়িয়ে দেয়। যদি এভাবে মুষ্টিমেয় লোকজনই মাছ ধরে টাকা কামাবে, তাহলে খাল খনন করে সরকারী টাকা নষ্ট করার কি দরকার ছিলো।
মৎস্যজীবি সাবের হোসেন বলেন, তারা মৎস্যজীবিও না, আবার খাল লিজও নেয়নি-অথচ দেদারছে মাছ মেরে খাচ্ছে। অথচ তাদের হুমকির কারণে আমরা খালে মাছ ধরতে না পেরে কষ্টে দিন যাপন করছি।
খাল সেঁচে মাছ ধরার বিষয়ে অভিযুক্ত ইমান আলীর কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ৬ মাস যাবৎ আমরা খাল পাহারা দিয়ে রেখেছি, ডালপালা ফেলে মাছের আশ্রয়স্থল করেছি, এখনতো আমরা মাছ ধরবোই। তাছাড়া বর্তমানে খালে যে বড় আকারের দামি দামি মাছ আছে, সেগুলো কি অন্যান্যের ধরতে দেয়া যায়, আপনারাই বলেন। তার সহযোগী হুজুর আলীর কাছে সরকারী খালে অন্যদেরকে মাছ ধরতে বাধা দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা স্থানীয় একটি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতিকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে খালের দায়িত্ব নিয়েছি, তবে সমিতির নাম তারা বলতে পারেননি। এ সময় তারা এ প্রতিবেদককে প্রয়োজন মত মাছ নিয়ে যাবার প্রস্তাবও দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়াম খাতুন জানান, আমি বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে সেচ কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তারপরও যদি পুনরায় একই কাজ করে তাহলে আমি তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।