টিপ বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। নারীর সাজসজ্জার বহুল প্রচলিত একটি উপকরণ। সেই টিপ নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ। এটি নিঃসন্দেহে দুঃখজনক ঘটনা। টিপ তো আসলে প্রতীকী ব্যাপার। মূলত এখানে নারীর প্রতি যে সম্মান দেখানো উচিত ছিল, তার ব্যত্যয় ঘটেছে। এটা কেন হবে? একজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে অবশ্যই সৌজন্য ও শালীনতা বজায় রেখে বক্তব্য দিতে হবে।
এই ধর্মান্ধতা, মৌলবাদী মানসিকতা- এসব পুলিশের মধ্যে থাকলে হবে না, আমি মনে করি থাকা উচিত না।
নারীর সঙ্গে, শিশুর সঙ্গে, এককথায় মানুষের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে, সে বিষয়ে পুলিশের মৌলিক প্রশিক্ষণের সময়ই বিশেষভাবে বলে দেওয়া হয়। এগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। পুলিশের ইউনিট প্রধানরা প্রতি মাসে তাদের অধীনদের নিয়ে একটি সভা করেন। যাকে বলা হয় কল্যাণ সভা। সেখানে এসব কথা বলতে হবে। নারীর প্রতি সম্মান, শিশুর প্রতি সহানুভূতি, সেবাপ্রত্যাশীর প্রতি আচরণ, সংবিধান, মানবাধিকার এসব নিয়ে কথা বলতে হবে। প্রশিক্ষণের সময় তো বলা হয়, কিন্তু পরে অনেকে ভুলে যান- এ কারণে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এসব বিষয়ে নিয়মিত কথা বলতে হবে।
তবে আমি বলব, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বাংলাদেশ পুলিশের ৫০ বছরের ইতিহাসে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি। এরইমধ্যে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে আর এমন কিছু ঘটবে না। তদন্তসাপেক্ষে নিশ্চয়ই তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নারী-শিশুর প্রতি যেন আর কখনও এমন আচরণ না করা হয় সে ব্যাপারে সবাই সজাগ হবে।
পুলিশে একজন নতুন সদস্য যুক্ত হলে তাকে সার্বিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে পুলিশ একটি বড় বাহিনী। এখানে দুই-চারজন ধর্মান্ধ থাকতে পারেন। কেউ হয়তো মাদ্রাসাছাত্র থাকেন। এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি কেমন, কোন মানসিকতার, তার লেখাপড়া, ব্যাকগ্রাউন্ড কী, তা জানতে হবে। জেনে তারপর মতামত দেওয়া যাবে। তিনি যদি মাদ্রাসার ছাত্র হন, তাহলে ধরে নেওয়া হবে তিনি টিপ পছন্দ করেন না। আর যদি তা না হয়, তাহলে কেন তিনি এ কথা বলেছেন, তা বুঝতে তার সম্পর্কিত সব তথ্য বিশ্নেষণ করে দেখতে হবে।
আসলে মানুষ তো-কখন তার নৈতিক স্খলন হয়, মন-মানসিকতার পরিবর্তন হয়, তা বোঝা মুশকিল। বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে যখন জঙ্গি ঢুকে পড়েছিল, কিছুকিছু সদস্য জঙ্গিবাদে দীক্ষা নিয়েছিল, তখন আমরা (পুলিশ) অত্যন্ত সতর্ক ছিলাম। প্রতিটি পর্যায়ে সতর্ক করা হয়েছে এবং পুলিশের মধ্যে আমরা এমন কিছু পাইনি। এখন এই কেসটা নিয়ে স্টাডি করলে বিষয়টি বোঝা যাবে। তিনি কাদের সঙ্গে চলতেন, তার মধ্যে পরিবর্তন কেন এলো-সেগুলো তদন্ত করে দেখতে হবে।