করোনা পরিস্থিতির কারণে দু বছর শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামায়াত বন্ধ থাকার পর এবারে ১৯৫ তম বৃহত্তম ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মাঠ পরিচালনা কমিটি আশা করছেন এবারে স্মরণকালের মুসুল্লীদের উপস্থিতিতে বৃহত্তম ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাট পরিচালনা কমিটির সাধারণ পরিষদ ও কার্যকরী পরিষদের সভায় ঈদ জামায়াতের বিষয়টির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আলোচনায় অংশ নেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যডভোকেট জিল্লুর রহমান, পুলিশ সুপার মোঃ মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম বার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পারভেজ মিয়া, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম সরকার,ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জহিরুল ইসলাম তালুকদার, র্যাব ১৪ সিপিসি-২ এর কমান্ডার মেজর শাহরিয়ার মাহমুদ খান, জেলা সিনিয়র তথ্য অফিসার মোঃ শামসুল হক,ই্সলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মোঃ মহসিন খান,জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শামসুল ইসলাম খান মাসুম, ড.সৈয়দ আলী আজহার, চ্যানেল আইয়ের চীফ রিপোর্টার চকর মালিথা, কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি একে নাছিম খান, সনাক সভাপতি সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা দুলুসহ জনপ্রতিনিধি,বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ ও মাঠ পরিচালনা কমিটির সদস্যগণ।
সভায় উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত আয়োজনের জন্য কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ময়দান প্রস্ততি নেওয়ার জন্য বিভিন্ন বিভাগকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাত আয়োজনের জন্য ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির গ্রহণ করা মাঠ প্রস্তুতকরণের কাজ, মাঠ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নকরণ, পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও রঙের প্রলেপ দেওয়ার কাজসহ বৃহত্তম এই জামাতে অংশ নেয়া মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা চার স্তরের একটি নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হবে। মাঠে বসানো হবে সিসি ক্যামেরা ও বেশ কয়েকটি অস্থায়ী টাওয়ার। এসব টাওয়ারের মাধ্যমে মাঠের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। ধাতব বস্তু শনাক্তকরণ যন্ত্র (মেটাল ডিটেক্টর) দিয়ে তল্লাশি করে মুসল্লিদের মাঠে ঢোকার সুযোগ দেওয়া হবে। পর্যবেক্ষণে ড্রোন ক্যামেরার পাশাপাশি স্নাইপার রাইফেল হাতে পাহারা দেবেন র্যাব। মাঠে শুধু মুসুল্লীরা জায়নামাজ ও মুখে মাস্ক ছাড়া অন্য কিছু ও মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় আরও জানানো হয় এবারে শোলাকিয়ায় ১৯৫ তম ঈদুল ফিতরের জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। ইমামতি করবেন মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকছেন মাও. মো. সোয়াইব, মাও.হিফজুর রহমান। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে বরাবরের মতো এবারও ঈদুল ফিতরের দিন ‘শোলাকিয়া এক্সপ্রেস’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা থাকবে।
২০১৬ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে এবার নেয়া হবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিপুল সংখ্যক র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন থাকবে বিজিবি। নিরাপত্তার স্বার্থে জায়নামাজ ও মাস্ক ছাড়া অন্য কিছু সঙ্গে নিতে পারবেন না মুসল্লিরা।
মাঠে জামায়াত আদায় করার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ দেশ বিদেশের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পরিশেষে মাঠ পরিচালনা কমিটির প্রয়াত সদস্য ও প্রয়াত ইমামদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা ও দেশ জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন ঈদগাহ মাঠে পাঞ্জেগানা মসজিদের ইমাম আ. সালাম গোলাপ।