মায়ের দুই পা কেটে গেছে ট্রেনের নিচে পড়ে। চা বিক্রেতা তুষার নিজের হাতে থাকা টাকা খরচ করে চিকিৎসা শুরু করেন। এরপর ঢাকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাত পেতে চালান মায়ের চিকিৎসা ব্যয়। এখন এলাকাতে এসে মায়ের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে ঘুরছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। হাতপেতে তোলা টাকাও শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন আর চলছে না তুষারের মায়ের চিকিৎসা। প্রতিদিন যেখানে তিনটি ইনজেকশন দেওয়া দরকার সেখানে গত ছয়দিনে একটি দিতে পেরেছেন। টাকার অভাবে নিয়ম করে ওষুধও খাওয়াতে পারছেন না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকার দাসপাড়ায় বসবাসরত তুষার দাস মাকে বাঁচাতে চান। এজন্য তিনি সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য কামনা করেছেন। পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং পৌর মেয়র মো. তাকজিল খলিফা কাজল এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ওই দু'জনকে বিষয়টি জানানো হবে বলে জানান তুষার। কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে ০১৭৬৭৩৬৮৮৪৫ নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ করেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মা সরস্বতী দাস, স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে তুষার দাসের সংসার। ময়মনসিংহ জেলায় আদি নিবাস হলেও অনেক বছর ধরে থাকছেন আখাউড়াতে। তুষার হেঁটে হেঁটে চা বিক্রি করেন। বর্তমানে আখাউড়ার দাসপাড়ার রণজিৎ দাসের বাড়িতে তিনি ভাড়া থাকেন। সোমবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একটি চৌকিতে শুয়ে আছেন দুই পা বিহীন সরস্বতী দাস। ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন। একটু পর পর গুংগানির শব্দ করছিলেন। চোখে জল। তুষার দাস জানান, ঘটনা এ বছরের ফেব্রুয়ারির ২ তারিখে। স্বজনদের নিয়ে তার মা সীতাকুন্ডে যান অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। ফেরার পথে সীতাকুন্ড স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠেও স্বজনদের খোঁজে আবার নামেন তিনি। এরইমধ্যে ট্রেন ছেড়ে দিলে তিনি কাটা পড়েন। সাথে সাথেই তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক দুই পা কেটে ফেলেন। প্রায় ৮৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে চিকিৎসা করাতে। তুষার দাস জানান, ঢাকায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে মায়ের জন্য সাহায্য তুলেছেন। তার হাতে আর টাকা নেই। এক সপ্তাহ হলো মাকে বাসায় নিয়ে এসেছেন। এখন প্রতিদিন ৮৫০ টাকা দামের তিনটি ইনজেকশন দেওয়ার কথা বলেছেন চিকিৎসক। কিন্তু এত টাকা জোগাড় সম্ভব হচ্ছে না। গত পাঁচদিনে মাত্র একটি ইনজেকশন দিতে পেরেছেন, তাও একজন এক হাজার টাকা সহযোগিতা হিসেবে দিয়েছেন বলে। তিনি আরো জানান, স্ত্রী অসুস্থ বিধায় বাবার বাড়িতে আছে বলে মায়ের সেবা করতেও সমস্যা হচ্ছে। মনোমালিন্য থাকায় স্ত্রী আসবে কি-না সেটাও নিশ্চিত নয়। রমজান মাসে চা বিক্রি বন্ধ বিধায় নিজে সময় দিতে পারছেন। তবে চা বিক্রি বন্ধ থাকায় আয় নেই বলে এখন সমস্যা আরো বেড়েছে। তুষারের বাড়ির মালিক রণজিৎ দাস বলেন, 'তুষারের মাকে চিকিৎসা করানো তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসতে হবে। আমরাও চেষ্টা করছি কিছু একটা করতে। আমার ভাড়া বাবদ ১০ মাসের যে পাওনা সেটা দিতে হবে না বলেছি।'