রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড কেশরহাট শাখায় গ্রাহকের কাছ থেকে ৪৩ হাজার টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজে তিন সদস্যের চক্রটিকে সনাক্ত করা গেলেও তাদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছেন, তারা প্রতারক চক্রটিকে খোঁজার চেষ্টা করছেন। বুধবার দুপুরে ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড কেশরহাট শাখার এক মহিলা গ্রাহক ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের পর ঘটনা ঘটেছে। ভোক্তভোগী মহিলা মোহনপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট মহল্লার রেজিয়া বিবি সকাল ১০ টার পর নিজের একাউন্টের চেক জমা দিয়ে ৭৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। কাউন্টার থেকে ৫০০ টাকার বান্ডিল বুঝে নেয়ার সময় পার্শে অবস্থান করা ব্যক্তি খুচরা টাকাগুলো নোট করে দেয় বলে হাতে নিয়ে টাকা গুনতে থাকে। এ সময় মহিলা গ্রাহক বুঝে উঠার আগেই গণনা শেষ করে টাকাগুলো মহিলার কাছে থাকা ব্যাগের ভেতর রেখে দেয়। এরপর চোখের পলকেই ব্যাংকের গেটদিয়ে বের হয়ে যায় চক্রটি। যা ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এরপর ব্যাগ থেকে টাকা বের করে গুনে দেখে ৪৩ হাজার টাকা কম রয়েছে। তখন তিনি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেন। তিনি বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। বিষয়টি বর্তমানে খতিয়ে দেখছেন মোহনপুর থানা পুলিশ। তবে ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মাত্র ১৩ মিনিটের সময় নিয়ে চক্রটি প্রতারণার কাজটি সম্পুর্ন করে। শুরুতে সকাল ১০ টা ৫১ মিনিটে চক্রের তিন সদস্য তিনদিক থেকে এসে গেটদিয়ে ব্যাংকের ভেতর প্রবেশ করে। ঠিক ১৩ মিনিটে মধ্যে প্রতারণা করে দ্রুত বেরিয়ে যায়। ফুটেজে দেখায় যায়, চক্রটির প্রধান ব্যক্তি পোশাকে পরিপাট অনেকটা ভদ্রবেশী মধ্যবয়সী লোক। বাকি দুই সহযোগী বৃদ্ধ বয়সী দাড়িওয়ালা। এদের একজন লুঙ্গি পড়া খুড়া বেশে চলতে দেখা যায়। অপরজন প্যান্ট শার্ট সেটে এসেছেন। দেখে উপায় নেয় এরা ভদ্র পোশাকের আদলে মুখোশধারী প্রতারক।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চক্রটির তিন সদস্যের একজন অ্যাকাউন্ট খোলার কথা বলতে গ্রাহক সেজে আসে। গ্রাহক হতে কি কি কাগজ লাগবে তা জেনে নিয়ে আবার চলে যায়। এর বেশি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কিছু বলতে বা সিসিটিভি ফুটেজ হস্তান্তর করতে চাননি।
ব্যাংকের প্রধান শাখা কর্মকর্তা (এফএভিপি) মো. সিরাজুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অপরিচিত তিন ব্যক্তি ব্যাংকে প্রবেশ করে গ্রাহকের সাথে প্রতারণা করেছে। এদের স্পষ্ট স্থিরচিত্র পাওয়া গেছে। পুলিশের তদন্তে এদের পরিচয় সনাক্ত করে পরবর্তী ব্যাবস্থার আশ্বাস ব্যাংক কর্তৃপক্ষের।
এদিকে, ভুক্তভোগী মহিলা গ্রাহকের ছেলে মো. রকি বলেন, আমরা দরিদ্র মানুষ। আমি সিএনজি গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাই। মায়ের একাউন্টে টাকা জমা করি। প্রয়োজনে আজকে মা টাকা তুলতে ব্যাংকে যায়। টাকা ব্যাগে তুলে নিয়ে দেখে ৪২ হাজার টাকা আছে। বাকি ৪৩ হাজার টাকা ব্যাগে নেয়। তিনি বলেন, টাকা হারিয়ে আমার মা এখন মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। আমরা থানায় অভিযোগ করেছি। থানা পুলিশ এসে তদন্ত করে গেছেন।
মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ইসলামি ব্যাংকের কেশরহাট শাখায় মহিলা গ্রাহকের সাথে প্রতারণার বিষয়টি অভিযোগ পেয়েছি। এটি তদন্ত করছেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) পারভেজ। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।