বিগত ১৮ বছর যাবত শিকলে বন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন মানসিক ভারসাম্যহীন ২ সন্তানের জননী চায়না বেগম (৩৪)। বিধবা মা এবং দিন জুর ভাই সাইফুলের সংসারে বোঝা হয়ে আছে চায়না। অভাবের তাড়নায় চায়নার ভাল কোন চিকিৎস াদিতে পারছেনা পরিবারটি। আজও ওই পরিবারে মেলেনি ভিজিডি, ভিজিএফ, প্রতিবন্ধীভাতা বা কোন সরকারী অনুদান।
সরে জমিনে গিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের জাউনিয়ার চর গড়াইমারী গ্রামের মৃত নাছির আলীর স্ত্রী সাহাতনের পরিবারের এমনই করুন দৃশ্য।
প্রতিবেশী কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাত্র ১২ বছর বয়সে প্রায় ২২ বছর আগে তার বিয়ে হয় একই এলাকার কাচানী পাড়া গ্রামের আবেদ আলীর সাথে। বিবাহিত জীবনে ৩ বছরের মধ্যেই কিশোরী বয়সে দুই টি কন্যাসন্তান জন্ম দেয় চায়না।
প্রথম সন্তান জন্মের পর থেকেই চায়নার অস্বাভাবিক আচরণ শুরু হয়। মাঝে মধ্যে স্বামীরবাড়ী থেকে এদিক-সেদিক পালিয়ে বেড়াতো কাউকে না বলেই। ভারসাম্যহীন অবস্থাতেই দ্বিতীয় কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়ার পর স্বামী আবেদ আলী বিবাহ বিচ্ছেদ ছাড়াই তাকে সরিয়ে দেয় দুই সন্তানসহ। আবেদ আলী অন্যত্র বিয়ে করে খোঁজ-খবর নেয় না স্ত্রী সন্তানদের। ১৮ বছর যাবৎ বিধবা বৃদ্ধ মা ও দিনমজুর ভাই সাইফুলের আশ্রয়ে নিদারুন কষ্টে দিন যাচ্ছে তার।
চায়নার দুইটি কন্যাসন্তান কে লালন পালন করে বিয়ে দিয়েছে ওই পরিবার।বৃদ্ধ মাও ভাই,পাবনা ও ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে এবং বিভিন্ন কবিরাজী চিকিৎসার জন্য ঘুরে ঘুরে সহায়-সম্বল হাড়িয়ে নিঃস্ব প্রায়। বৃদ্ধ মা সাহাতন বয়সের ভারে ঠিকমত সেবা-যত্ন করতে পারছেনা চায়নার। না পারছে খাবার জোগাতে, না পারছে ভাল চিকিৎসা দিতে। তা ছাড়া সরকারী কোন অনুদানও পায়নি পরিবারটি।
চায়নার ভাইসাইফুল জানান, “দিন মজুরী কাজ করে নিজেদের দু-বেলার খাবার জোগার করা খুব কষ্ট হয়। চিকিৎসার টাকা পামু কই? সরকারী ভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিলে ভাল হইতো।”
প্রতিবেশী লালমিয়া, মহসিন আলীজানান, “ছোট্ট কালে বিয়ে হয় চায়নার। বিয়ের এক বছর পর থেকেই সে পাগল। ছাইড়া দিলে বিভিন œজায়গায় চইলা যায়। একবার পালাইয়া ভারতেও গিয়েছিল। চায়নাকে নিয় াপরিবারটি খুব সমস্যায় আছে। সে জন্যই তাকে শিকল দিয়ে বেঁধেরাখে।”
ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আজাদ খান জানান, “ভারসাম্য হীনভাবে চলা ফেরার জন্য তাকে সব সময় কোমরে বা পায়ে শিকল দিয়ে বেধে ঁরাখা হয়।পরিবারটি অতিকষ্টেি দিন পার করছে।”
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা হাসান সাদিক মাহমুদ এর সঙ্গে। তিনি জানান, “আমি এই উপজেলায় নতুন এসেছি। কয়েক দিন আগে ভাতাভোগী তার মা শিকলে বাধাঁ অবস্থায় আমার কার্যালয়ে নিয়ে আসে চায়নাকে পরে বিস্তারিত জেনে প্রতিবন্ধীর নতুন তালিকায় চায়না বেগমের নাম অন্তর্ভূক্ত করেছি। চায়নার চিকিৎসা পত্র আনতে বলেছি। কাগজপত্র হাতে পেলে তাকে চিকিৎসার সহযোগিতা করা হবে।