আগামী ১৩ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে উপমহাদেশের বিখ্যাত চাটমোহর উপজেলা বোঁথর চড়ক পূজা ও মেলা। তিনদিন চলবে এই মেলা। মহামারী করোনার কারণে বিগত ২ বছর মেলা বন্ধ ছিল। এই চড়ক পূজা ও মেলায় বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অসংখ্য হিন্দুর সমাগম ঘটে। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন মরা বড়াল নদের তীরের বোঁথর গ্রামটি হয়ে ওঠে তীর্থ ক্ষেত্রের কেন্দ্রবিন্দুতে। সিন্ধু সভ্যতা থেকেই চাটমোহরের বোঁথর গ্রামে এই চড়ক পূজা ও মেলা হয়ে আসছে। এবারের মেলার উদ্বোধনী দিনে রাজশাহীস্থ ভারতীয় উপ-হাইকমিশনার সঞ্জিব ভট্ট প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে আয়োজকরা জানান।
শুদ্র হিন্দু সম্প্রদায়ের মুক্তির বার্তা নিয়ে মহাদেবের আবির্ভাব হয়। সে সময় উচ্চ বর্ণ হিন্দু দ্বারা নিম্ন বর্ণ হিন্দুরা নিগৃহীত হতো। একপর্যায়ে ব্রাম্মণবাদের বিলোপ ঘটলে নিম্নবর্ণের হিন্দুরাও এই উৎসবে সম্পৃক্ত হয়। রুপ নেয় সার্বজনীনে। এ পূজার আয়োজন করা হয় বান রাজার আমল থেকে। শত শত বছর ধরে চলছে এই পূজা ও মেলা।
মূলতঃ ২২ চৈত্র সন্ধ্যায় পাঠ ঠাকুরের পাটে ধূপ দিয়ে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। বোঁথর শিব মন্দির থেকে পাঠ ঠাকুর নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ি বাড়ি। ২৬ ও ২৭ চৈত্র ফুল ভাঙ্গা ও কালি নাচ শুরু হয়। তারপর প্রতিমা আসনে বসে। মেলা হয় চৈত্র মাসের শেষ দুই দিন ও পহেলা বৈশাখ। আগে মেলা হতো মাসব্যাপী। এখন হয় তিন দিন। চৈত্র সংক্রান্তির সন্ধ্যায় (সরকারি পঞ্জিকা মতে পহেলা বৈশাখ) প্রায় ১৩ হাত লম্বা চড়ক গাছ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোরানো হয়। এর আগে পূজারীরা ফুল,দুধ ও চিনি দিয়ে চড়ক গাছে পূজা দেয়। মহাদেব মন্দিরের চালে বাতাসা ছিটায় মঙ্গলার্থে।
জানা যায়,ভূমিকম্পে বিধ্বন্ত হলে বাংলা ১২৫২ সালে বোঁথর শিব মন্দির পুনঃসংস্কার করা হয়। ১৯৮৪ সালে শিব মন্দিরের কষ্টি পাথরের মহাদেব মূর্তিটি চুরি হয়ে গেলে ১৯৯০ সালে তা পুনঃস্থাপন করা হয়। চড়ক পূজা উপলক্ষে মহাদেব আসনে তোলা হয় ২৮ চৈত্র,৭ বৈশাখ নামানো হয়। ১৩ জন প্রধান বৃত্তাকে ৬ দিন উপবাস থাকতে হয়।
বোঁথর একটি গ্রাম। চাটমোহর পৌর শহর সংলগ্ন বড়াল নদের উত্তর পাড়ের আদর্শ গ্রাম এটি। চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহে উৎসবমূখর হয়ে ওঠে গ্রামটি। দেশ-বিদেশের আত্মীয়স্বজন আসে এই মেলায়। একসময় চলনবিল অঞ্চলের সকল নতুন-পুরাতন জামাইকে আনতে হতো মেলা উপলক্ষে। সকল পণ্যই মিলতো এই মেলায়। হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রীতির ক্ষেত্র ছিল এই মেলা। সে সব এখন ইতিহাস। বোঁথর চড়ক পূজা ও মেলার যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা ঠিক আছে,শুধু কমেছে মেলার জৌলুস।
চাটমোহর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক অশোক চক্রবর্তী জানান,করোনার কারণে এক বছর পুরোই বন্ধ ছিল পূজা ও মেলা। এক বছর শুধু পূজার আয়োজন করা হয়েিেছ।। আশা করা হচ্ছে এবছর পূজা ও মেলার পুরোনা রুপ ফিরে পাবে। রাজশাহীস্থ ভারতীয় উপ-হাই কমিশনার এবার পূজায় প্রধান অতিথি হিসেবে আসতে সম্মতি দিয়েছেন। তিনি জানান,বাঙালীর এই সার্বজনীন উৎসব যথাযথভাবে আয়োজন করা হচ্ছে। প্রশাসন,জনপ্রতিনিধি,সাংবাদিকসহ সকলের সহযোগিতা বরাবরের মতোই পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।