টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাসাখানপুর গ্রামের মো. শাকিল আহমেদ। সাড়ে চার বছর আগে তার বাবা মো. মির্জা মিয়া মারা যান। এরপর থেকেই মাসহ তাদের তিন ভাই বোনের সংসারে অন্ধকার নেমে আসে। বড় ভাইয়ের আয়ের টাকায় কোনো রকম সংসার চলতে থাকে তাদের।
সম্প্রতি ১২০ টাকার বিনিময়ে পুলিশ সদস্য পদে আবেদন করেন শাকিল। শনিবার (৯ এপ্রিল) রাতে বাংলাদেশ পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হন তিনি। পরে তাকে জেলা পুলিশের আয়োজনে পুলিশ লাইন্স মাল্টিপারপাস শেডে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার।
শুধু শাকিল আহমেদ নয়, তার মতো টাঙ্গাইল জেলার ৮৭ জন পুরুষ ও ১৩ নারীর সরকারি নির্ধারিত ফি ১২০ টাকার বিনিময়ে পুলিশে চাকরি হয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, ১০০ পদের বিপরীতে ৩ হাজার ৭২২ জন আবেদন করেছিলেন। ২০ মার্চ থেকে যাচাই বাচাই শুরু হয়। বেশ কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে শনিবার রাতে লিখিত ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। আগামী মঙ্গলবার তাদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে মেডিক্যাল টেস্ট করা হবে। পরবর্তীতে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে চূড়ান্ত মেডিক্যাল টেস্ট করিয়ে ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠানো হবে।
ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নিয়োগ বোর্ডের সদস্য গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন, ঢাকা রেঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার সাজিদুর রহমান, টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরফুদ্দীনন আহমেদ প্রমুখ।
শাকিল আহমেদ বলেন, ‘অনেকেই বলতো পুলিশের চাকরি পেতে লাখ লাখ টাকা ঘুষ লাগে। তারপরও দৃঢ় মনোবল নিয়ে আবেদন করার পর নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি। পুলিশের চাকুরি পেতে যে ঘুষ লাগে না তার জলন্ত উদাহারন আমি নিজে। আমি যে রকম বিনা পয়সায় চাকরি পেয়েছি, সে রকম আমিও টাকা ছাড়া মানুষকে সেবা দিবো। এজন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করছি।’
শাকিলের মা সাহিদা বেগম বলেন, ‘খুব কষ্ট মানুষ হওয়া আমার ছেলেটি পুলিশের চাকুরি পেয়েছে। এতে আমি খুব খুশি। আমার শাকিল যাতে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে এজন্য সকলের দোয়া ও সহযোগিতা করি।’
নাগরপুরের মোকনা গ্রামের আরিফ হোসেন বলেন, ‘গতবারও আমি ওয়েটিং লিস্টে ছিলাম। এবার চাকরি পাওয়ায় আমি খুবই খুশি। সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়া আমার একটি টাকাও খরচ করতে হয়নি। গতবার ভেবেছিলাম ঘুষ না দেওয়ায় হয়তো আমার চাকরি হয়নি। এবার চাকুরি পাওয়ার পর প্রমাণ হলো পুলিশের চাকরিতে ঘুষ লাগে না।’
সখীপুরের লাবন্য সরকার বলেন, ‘পরিবারের হাল ধরতে আমার একটি চাকরি প্রয়োজন ছিলো। পুলিশের এই চাকরি আমার জন্য অনেক উপহার হয়েছে। এখন পরিবারের পাশাপাশি দেশের মানুষের পাশেও দাঁড়াতে পারবো।’
পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, আইজিপি মহোদয়ের উদ্যোগে সম্পূর্ণ নতুন নিয়মে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, শুধু টাঙ্গাইল জেলা নয়, সারাদেশেই পুলিশ সদস্য নিয়োগে স্বচ্ছ পক্রিয়ার মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। মেধার ভিত্তিতেই যাচাই বাছাই করা হয়েছে। মানুষের ভ্রান্ত ধারণা ভুল প্রমানিত হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষার আগে থেকেই প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত যোগ্য প্রার্থীদের কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন এবং দালাল চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধও করা হয়েছে।’