জামালপুরের বকশীগঞ্জের সীমান্তবর্তী ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামের ফসলি জমি ও ধান ক্ষেতে তান্ডব চালিয়েছে ভারতীয় বুনোহাতির পাল। গত বুধবার মধ্যরাতে অশেনা কোনা টিলার পাশে বোরো ধান ক্ষেতের ব্যপক ক্ষতি করেছে হাতির পাল। গত ৫ দিন যাবত পাহাড়ের টিলায় অবস্থান করছে বন্যহাতির পাল। সূযোগ পেলেই লোকালয়ে এসে তান্ডব চালাচ্ছে। রাত জেগে পাহাড়া দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ও ডাক ঢোল পিটিয়ে হাতির আক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছেনা। এতে কাচাঁ-আধাপাকা বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল নিয়ে শঙ্কিত পাহাড়ী এলাকার মানুষ। হাতি আতঙ্ক বিরাজ করছে সীমান্তবর্তী ১০ গ্রামের মানুষের মাঝে।
জানা গেছে, গত ৬ এপ্রিল বুধবার ভারতের কাঁটাতারের বেড়া পেড়িয়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টি বন্যহাতি বকশীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নের গারো পাহাড়ের লোকালয়ে প্রবেশ করে। রাতভর পাহাড়ের অশেনা কোনা এলাকায় গাছপালা,সবজি ক্ষেত ও বোরো ধান খেয়ে বিনষ্ট করে। সকালে পাহাড়ের উঁচু টিলায় অবস্থান নেয় হাতির দলটি। এতে করে হাতি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। দিনের বেলায় হাতির পাল পাহাড়ের উঁচু টিলায় অবস্থান করলেও রাতে দলবেঁধে সেগুলো নেমে আসে লোকালয়ে। রাতভর চালায় তান্ডব,খেয়ে সাবাড় করছে ফসল। তাড়াতে গেলেই বাড়িঘরে হামলা চালায় হাতির পাল। ফলে অশেনা কোনা,সাতানীপাড়া, শোমনাথপাড়া,বালুরচর,টিলাপাড়া,পাগল গোছা, দিঘলা কোনা,সোমনাথপাড়া ও হাতিবারকোনা সহ সীমান্তবর্তী ১০ গ্রামের মানুষের মধ্যে হাতি আতঙ্ক বিরাজ করছে। ওইসব এলাকার মানুষের দিন কাটছে শঙ্কায়,রাত কাটছে নির্ঘুম। জমির ধান ও ফসল বাচাঁতে রাতের বেলা আগুন জ্বালিয়ে ও ডাক ঢোল পিটিয়ে হাতি তাড়ানোর প্রাণপন চেষ্টা করছেন সেখানকার মানুষ।
এ ব্যাপারে অশেনা কোনা এলাকার কৃষক আশরাফুল ইসলাম দ্বীপ বলেন,গত ৫ দিন যাবত হাতির পাল পাহাড়ের টিলায় অবস্থান করছে। রাতে নেমে আসছে লোকালয়ে। ফসল বাচাঁতে রাত জেগে পাহাড়া দিতে হচ্ছে হাতি। আগুন জ্বালিয়ে ও ডাক ঢোল পিটিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করা হলেও থামানো যাচ্ছে না হাতির তান্ডব।
কৃষক ইয়াকুব আলী ও মিটার আলী বলেন,প্রতিবছর হাতি আমাদের ফসল বিনষ্ট করে। অনেক কষ্ট করে ধান চাষ করেছি। বিগত বছরে ধান পাকা শুরু হলে হাতি আসে এবার ধান পাকার আগেই চলে এসেছে। সারা রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছি। জানি না কপালে কি আছে। হাতির কারণে কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারবো কিনা জানি না। হাতির কবল থেকে আমরা রেহাই চাই। না হলে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁেচ থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) বকশীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি রাহুল রাকসাম বলেন,হাতির ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারি না। সারাক্ষণ শঙ্কিত থাকি,কখন যানি হাতি লোকালয়ে এসে তান্ডব চালায়। ভয়ে ভয়ে দিন কাটে আমাদের। পাহাড়ী এলাকার মানুষের হাতিই এখন বড় শত্রু। আমরা এই হাতি সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান চাই।
এ ব্যাপারে আদিবাসী সংগঠন ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান হোসিও ম্্রং জানান, রাত জেগে পাহারা দিয়েও ঠেকানো যায়না হাতির দলকে। হাতির স্মৃতি শক্তি অত্যন্ত শক্তিশালী। হাতি একবার যে ক্ষেত লক্ষ করে তা বিনষ্ট করবেই। হাতির আক্রমণ থেকে বাচঁতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন আদিবাসী এই নেতা।
এ ব্যাপারে কামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান লাকপতি জানান,সীমান্তে হাতিই বড় সমস্যা। হাতির তান্ডবে দিশেহারা সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ। প্রতি বছর হাতি ফসলের ব্যপক ক্ষতি করে। দিনের বেলায় টিলায় থাকলেও রাত হলেই লোকালয়ে নেমে আসে। সীমান্তে হাতির বিষয়টি স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।