মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। নদী রক্ষা কমিশন ও জেলা প্রশাসনের তৎপরতার কারণে চাঁদপুর সদর এল্কায় বালু কাটা বন্ধ থাকলেও এখানকার চক্র মতলবের সাথে মিলে ষাটনল এলাকায় এখন অবৈধ বালু উত্তোলন ও বিক্রি করা হচ্ছে।চাঁদপুরে সরকারিভাবে বালু মহাল ইজারা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশে বন্ধ রয়েছে। তাই অবৈধ বালু উত্তোলনের বৈধ দিতে মুন্সিগঞ্জ জেলার নাম ভাঙ্গনো হচ্ছে। চিহ্নিত চক্র বলে বেড়াচ্ছে তারা চাঁদপুর নয়,মুন্সিগঞ্জ নৌ সীমানায় ড্রেজারে বালু তুলছে।বাস্তবে তারা কিছু দিন যাবত চাঁদপুর নৌ সীমানার ষাটনলে বালু সন্ত্রাস করছে বলে জানা যায়।স্থানিয় সংসদ সদস্য এ ব্যাপারে কোন ভুমিকা রাখছে না।
একটি চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ অবাধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। এতে ভাঙনের হুমকিতে সেচ প্রকল্পের বাঁধ। প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত নৌ-যান জব্দ করা হলেও কোনোভাবেই মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। চাঁদপুরের মেঘনা নদীর তলদেশ থেকে একটি চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ অবাধে অপরিকল্পিত অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর তীরে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
ইতিমধ্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী ও জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণে পিছু হটতে শুরু করেছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা। চাঁদপুর সদরে বালু উত্তোলন করতে না পেরে বালু খেকোদের চোখ পড়েছে মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ বেষ্টিত মতলব উত্তর উপজেলার দিকে।
সরজমিনে মঙ্গলবার ১২ এপ্রিল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নের বাবু বাজার সংলগ্ন বয়ে যাওয়া মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে ভোর থেকে ৩০-৩৫টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে একটি চক্র। আর তা শত শত ভলগেট, কার্গো ও ট্রলারযোগে বালু ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ওই চক্রটির নেই কোনো বালু উত্তোলনের অনুমতি বা অনুমোদন।
পেশি শক্তি ব্যবহার করে প্রতিদিন কেটে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকার বালু। সরকার বঞ্চিত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বালু উত্তোলন ও বিক্রয় চলছে। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার নির্দেশ দেয়া হলেও তা কার্যক্রর হয়নি। বালু উত্তোলন করার কারণে তীব্র ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে চরের আশ্রয়ণ প্রকল্প, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ইকোনমিক জোন’সহ চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ।
বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে আগামীতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ এবং উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আরো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভাঙন রোধ করা যাবে না। বাঁধবাসী দ্রুত অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন- মতলব উত্তরের কাজী মিজানুর রহমান মিজান, চর কেওয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন গংরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা। তাদের তত্ত্বাবধানে ক্ষমতাধর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ম্যানেজ করে চলছে বালু উত্তোলন। তাদের ভয়ে অনেকে মুখ খুলে কিছুু বলতে পারছে না। এদের তত্ত্বাবধানে ক্ষমতাধর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ম্যানেজ করে চলছে দেদারছে অবৈধ বালু উত্তোলন।
ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফেরদাউস আলম জানান, সকালে লোক মুখে শুনতে পারলাম আমার ইউনিয়নের ভৌগলিক সীমা রেখার মধ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে বালু খেকোরা। আমি সাথে সাথে বালু উত্তোলনকারী কাজী মতিনকে ফোন দেই। প্রতিত্তরে মতিন বলে, আমি বালু উত্তালন করছি মুন্সিগঞ্জের সীমনায়। তখন আমি হতভম্ব হয়ে যাই। প্রকৃতপক্ষে বালু উত্তোলন করছে মতলব উত্তরের সীমানায় তথা ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের সীমানাই। আমি প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। মতলব উত্তর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূূমি) মো. হেদায়েত উল্ল্যাহ জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রায়ই উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে আসছে। আগামীকাল সরেজমিনে সেখানে যাবো। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, মেঘনা নদীতে চাঁদপুরের সীমানায় বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে। আগামীকাল পরিমাপ করবো। জায়গাটা মুন্সিগঞ্জের না চাঁদপুর জেলার তখন বোঝা যাবে। আমাদের সীমানায় হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে। বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম অবশ্যই বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে জেলা প্রশাসন।