বরগুনার তালতলীতে স্থানীয় প্রভাবশালী মালেক আকন তার মাছের ঘেরে লবণ পানি উঠানোর ফলে কৃষকদের চাষকৃত বোরো ধানের ক্ষেতে পানি প্রবেশ করে ৩০ একর জমির ফলন্ত বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে। সুপরিকল্পিতভাবে নোনা পানি উঠানোর ফলে চাষকৃত জমির ধান নষ্ট হওয়ায় ঋণের ভারে জর্জরিত কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়ছে। ক্ষতিপুরনের দাবীতে মঙ্গলবার থেকে ভূক্তভোগী কৃষকরা ধান ক্ষেতের মাঠে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে আসছে। খবর পেয়ে বুধবার বিকেলে উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবী উল কবির জোমাদ্দার ও তালতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু ঘটনাস্থন পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তাদের ক্ষতি পুরনের আশ্বাসে অবস্থান ধর্মঘট স্থগিত করেছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের সকিনা ও নিদ্রার চর এলাকার ২৭ জন কৃষক এনজিও থেকে লোন ও ধারদেনা করে তাদের প্রায় ৩০ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করে। বোরো ধানের ফলন ভাল হলেও স্থানীয় প্রভাবশালী মালেক আকন গত অমাবস্যায় পরিকল্পিতভাবে আমখোলা খালের স্লুইজসগেট ছেড়ে দিয়ে মাছের ঘেরে নোনা পানি উঠায়। এ সময় অমাবস্যার জোবার জোয়ারে লোনা পানি ঢুকে কৃষকদের প্রায় ৩০ একর ফলন্ত বোরো ধান ডুবে যায়। ধানক্ষেতে লোনাপানি প্রবেশের এক সপ্তাহের মধ্যে কৃষকদের বোরো ধানের চারা শুকিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে ধানের চারা পুরে গিয়ে ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে বোরো ধান চাষীরা ক্ষতির মুখে পরে ওই প্রভাবশালী মালেক আকনের কাছে জিজ্ঞাসা করলে সে কৃষকদেরকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে আসছে। অনেক কৃষক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এই বোরো ধান চাষ করেন। এই ধান ঘরে তুলতে না পেরে ঋণের ভারে জর্জরিত ২৭ জন বোরো চাষী এখন দিশেহারা। কৃষকরা কোনো উপায় না পেয়ে বিচারের আসায় উপজেলা ও জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এদিকে অসৎপ্রকৃতির প্রভাবশালী মালেক আকনের বিচার ও ক্ষতিপুরন চেয়ে ঐ ২৭ পরিবার বোরো ফসলের মাঠে মানববন্ধনসহ অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। বুধবার সরেজমিনে গিয়ে এদৃশ্য দেখা গেছে।
কৃষক মনির আকন বলেন, মুই এনজিও থেকে লোন নিয়ে ২ একর বোরো ধানের চাষ করছি। এই বছর এ্যামন বিপদ অইবে হ্যাঁ বুঝতে পারি নাই। এ্যাহানের প্রভাবশালী মালেক আকন তার ব্যক্তি স্বার্থে ঘেরে পানি উঠানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে স্লুইজগেট ছাইররা দিয়া নোনা পানি উঠাইছে। এই কারণে আমার ২ একর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট অইয়া গেছে। আমি আমার ক্ষতিপূরণ চাই।
আরেক কৃষক নিজাম জোমাদ্দার বলেন, আমার নিজের দেড় একর জমির ফসল সম্পূর্ণ পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে মালেক আকনের কাছে বললে তিনি উল্টো হুমকি দেয়। সে উল্টে বলেন তোরা যা পারো করিস, আমি কোনো ক্ষতি পূরণ দিতে পারবো না।
এ বিষয়ে মালেক আকন বলেন, আমি ঘেরে পানি উঠিয়েছি। তাতে কিছু কৃষদের ক্ষতি হয়েছে। তবে তারা যে পরিমান ক্ষতির কথা বলে তা হয়নি। বিষয়টি স্থানীয় ভাবে সমাধান হবে। তিনি আরও বলেন, আমি পানি উঠানোর আগে সবাইকে জানিয়েছি। আমি কোনো কৃষককে হুমকি দেইনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার এসএম রেজাউল করিম বলেন, খোজখবর নিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের ক্ষতিপুরনের কোন ব্যাবস্থা নেই। তবে মালেক আকনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করা হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওসার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে স্থানীয় মালেক আকনের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ এসেছে। তিনি বেশি ভালো লোক নয়। তাই উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কৃষকদের থানায় পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন নোনা পানির কারণে অনেক কৃষকের ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবী উল কবির জোমাদ্দার বলেন, কৃষকদের বোরো ধানের ক্ষতির খবর পেয়ে ওসিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের ক্ষতিপূরনসহ মালেক আকনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।