চিরাচরিত বাংলা পঞ্জিকার নিয়ম অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শুক্রবার দিনব্যাপী প্রায় দুইশ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী শুঁটকির মেলা। উপজেলা সদরের কুলিকুণ্ডা গ্রামে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রতি বছর বসে ব্যতিক্রমধর্মী এ শুটকির মেলা। স্থানীয়রা তাদের পূর্ব-পুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ মেলার আয়োজন করে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমদানি করা শুটকি। বহু বছর থেকে প্রচলিত এ মেলা নিয়মিতভাবে প্রতিবছর বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে কুলিকুন্ডা উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয়রা জানায়, এ মেলা আয়োজনের কোনো কমিটি নেই। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে এ মেলা বসছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শুটকি ব্যবসায়ী ছাড়াও ভোজন রসিকরা আসেন এ মেলায়।
এ মেলার ইতিহাস অনেক পুরনো। মেলায় শুটকি কিনতে আসা কুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা ঢাকায় বসবাসরত ডাক্তার রোকন উদ্দিন ভূইঁয়া বলেন, ছোট বেলা থেকে আমি নিয়মিত এ মেলায় শুটকি কিনতে আসি। দেশীয় মাছের শুটকি ভাল পাওয়া যায় এ মেলায়।
উপজেলার ব্রাক্ষনশাসনের বাসিন্দা কুতুব উদ্দিন বলেন, ছোটবেলায় বাপ-দাদার হাত ধরে এ মেলায় এসেছি। শুনেছি তারও বহু আগে থেকে এ মেলা চলে আসছে। এখনও আসছি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় প্রায় দুইশর বেশি রকমের শুটকির পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। এসব পসরায় বোয়াল, গজার, শোল, বাইন, পুঁটি ও টেংরাসহ দেশীয় মাছের তৈরি শুটকিই বেশি।
এছাড়া, মেলায় ইলিশসহ সামুদ্রিকসহ বিভিন্ন জাতের মাছের শুটকি পাওয়া যায়। শুটকি ছাড়াও ইলিশ ও কার্প জাতীয় বিভিন্ন মাছের ডিমও উঠেছে এ মেলায়।
মলায় নাসিরনগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট ও সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ীরা শুটকি নিয়ে আসেন।
অন্যদিকে আধুনিক সভ্যতার আগে থেকেই বিনিময় প্রথা চালু ছিল। সেই বিনিময় প্রথার ধারাবাহিকতায় নাসিরনগর সদরের লঙ্ঘন নদীর পাড়ে ভোর থেকে চলে পণ্যের বিনিময়ে পণ্যের বেচাকেনার মেলা। কেউ আসেন ধান, চাল আলু,গম, নিয়ে, আবার কেউ সরিষা,মরিচ নানা সবজি। এসব দেয়ার মাধ্যমে তারা নিবেন শুটকি। কি পরিমাণ শুটকি দেয়া হবে সেটা নিয়ে এখানে চলে দর কষাকষি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যায় এই পণ্যের বিনিময়ে পণ্য দেয়ার বাজারের কার্যক্রম। এখানে মহিলাদের উপস্থিতিই বেশি। স্থানীয় ইউপি সদস্য আক্কল আলী চকিদারকে সাথে নিয়ে সকাল থেকে শেষ পর্যন্ত এ মেলার তদারকি করতে দেখা যায়। তিনি জানান পণ্যের বিনিময়ে শুটকি বেচাকেনায় জাতে কোন সমস্যা না হয় সেজন্যই দেখাশুনা করছি।