“এই আইসক্রিম, আইসক্রিম, মলাই, নারকেল, কুলফি আইসক্রিম”। আইসক্রিমের কথা শুনলেই হয়তো স্মৃতির ভেলায় চড়ে অনেকেই হারিয়ে যাবেন শৈশবে। আর শৈশব মানেই মধুর স্মৃতিমাখা ছেলেবেলা। এ যেন এক রঙ্গিন জগতের অমলিন গল্প। আইসক্রিমওয়ালাদের হাক এখন আর শুনা যায় না। গ্রাম এবং পাড়া-মহল্লায়ও তেমন একটা দেখা মিলে না তাদের। কালেভাদ্রে দুই একজনকে শহরে কিংবা মেলায় দেখা যায়। হয়তো আধুনিকতার গ্যাড়াকলে পড়ে হারিয়ে গেছে এই পেশার লোকজন। বেছে নিয়েছে অন্যপেশা।
ঘড়ির কাটা তখন রাত নয় টা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরশহরের সড়ক বাজারে তখন রাতের নিস্তব্ধতা নেমে আসছে। এরই মাঝে কানে ভেসে আসে এক আইসক্রিম ফেরিওয়ালার হাক। কছে যেতেই হাতে ধরিয়ে দেন একটা কাঠি আইসক্রিম। দাম কত জিজ্ঞেস করতেই বলেন ভাই মাত্র ১০ টাকা। এই আইসক্রিম ফেরিওয়ালার নাম শয়ন মিয়া। বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। এখন থাকেন পৌরশহরের দেবগ্রাম এলাকায়। একটি ভাড়া বাসায়। এই শহরে প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি ফেরি করে আইসক্রিম বিক্রি করছেন। দিনে পাড়ামহল্লায় ফেরি করে আইসক্রিম বিক্রি করলেও সন্ধ্যার পর তার ঠিকানা সড়কবাজারের মায়াবী শপিং কমপ্লেক্সের সামনে। শয়ন জানায়, দুধ, নারিকেল, চিনি আর নরম বাশেঁর কাঠি তার আইসক্রিম তৈরির প্রধান উপকরণ। প্রতিটি আইসক্রিম তৈরিতে খরচ হয় সাড়ে ছয় টাকা। দৈনিক সাড়ে পাঁচ শ থেকে ছয় শ টাকা আয় করেন।তা দিয়েই চলে তার পাঁচ জনের সংসার। শয়ন মিয়া আরো জানান, তার কাঠি আইসক্রিম ছেলে বুড়ো সবাই কিনলেও বেশির ভাগ ক্রেতাই শিশু। তার আইসক্রিম বনানোর ভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াটি দেখতেও মানুষ ভীড় করে এবং আনন্দ পায়।
আখাউড়া পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শিপন হায়দার বলেন আইসক্রিমওয়ালারা নারকেল মাখানো আইসক্রিমের বাক্স নিয়ে বসে থাকত। খুচরো পয়সা খোঁজে নিয়ে ছুটে যেতাম আইসক্রিম কিনতে। শৈশবের সেই দিনগুলির শিহরণ এখনো অনুভব করি। তিনি আরো বলেন, একসময় আমাদের গ্রামেই দুটি আইসক্রিম ফ্যাক্টরি ছিল। এ পেশায় জড়িত ছিল কম করে হলেও অর্ধশতাধিক লোক। ফ্যাক্টরির জায়গায় এখন বহুতল মার্কেট হয়েছে। মনে হয় আইসক্রিম বিক্রেতারা এখন অন্য পেশা বেছে নিয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম ভ’ঁইয়া বলেন, আগে গ্রামেগঞ্জে আইমক্রিমওয়ালারা বাক্স দিয়ে ফেরি করে আইসক্রিম বিক্রি করতো। আইসক্রিমওয়ালার গান আর ঘন্টা বাজালেই ছুটে যেতাম। আব্বা ও আম্মার কাছ থেকে পয়সা নিয়ে আইসক্রিম কেনাটাই ছিল তখন অনেক আনন্দের। কোথায় হারিয়ে গেল সেই শৈশব।