করোনা পর পাবনার তাঁতিরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেস্টা করছে। তাঁরা বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে বন্ধ তাঁত সচল করছেন। গত দুবছর অব্যাহত লোকেশান কাটিয়ে উঠতে তাঁত পল্লীতে এখন চলছে দিনরাত ব্যস্ততা। আধুনিক প্রযুক্তির গ্রাফিক্স ডিজাইন ব্যবহার করা শাড়ি লুঙ্গির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই শিল্পকে নিয়ে তাঁরা আশার আলো দেখছেন। অন্যদিকে আধুনিক প্রযুক্তির কাছে টিকতে পারছে না সনাতন পদ্ধতি নির্ভর তাঁত ও তাঁতি সম্প্রদায়।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মান্ধাতা আমলের ধ্যানধারণা বাদ দিয়ে এ অঞ্চলের অনেক তাঁতি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিত্য নতুন ডিজাইনের শাড়ি লুঙ্গি তৈরি করছে। তাদের উৎপাদিত শাড়ি লুঙ্গি ইতোমধ্যে দেশের মধ্যে ব্যাপক সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। দেশের চাহিদার পাশাপাশি এ অঞ্চলের শাড়ি, লুঙ্গি,গামছা প্রতিবেশী ভারতেও ব্যাপকভাবে সমাদৃত হচ্ছে।ভারতের ব্যবসায়ীরা ঈদ, পূজা ও বিভিন্ন উৎসবকে সামনে রেখে পাবনা জেলার বিভিন্ন পাইকারী হাটে এসে সে সকল শাড়ি লুঙ্গি কিনে নিচ্ছেন। দেশ-বিদেশে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই বন্ধ তাঁত কারখানা আবার চালু করেছে।
বেড়া পৌর এলাকার বনগ্রাম দক্ষিন মহল্লার সিরাজুল ইসলাম নামের এক তাঁত কারখানার মালিক আজকের পত্রিকাকে জানান, করোনার দুবছর তাদের কারখানার উৎপাদিত লুঙ্গি চাহিদা কমে গিয়েছেছিল। কারখানার ২৪টি তাঁতের মধ্যে ১৫টিই বন্ধ করে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু করোনা সংকট কেটে গেলে তাঁতগুলো মান্ধাতা আমলের উৎপাদন কৌশল পরিবর্তন করে সেগুলো আধুনিকায়ন করে উৎপাদন শুরু করেছেন। গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন নিত্যনতুন নকশার শাড়ি লুঙ্গি নিয়ে বাজারে হাজির হচ্ছেন। এতে করে ভাল দামে শাড়ি লুঙ্গি বিক্রি করতে পেরে তারা আশার আলো দেখছেন। তিনি বলেন, যারা পুরাতন পদ্ধতিতে শাড়ি লুঙ্গি তৈরি করছেন তাঁরা এই ঈদের বাজারে উৎপাদিত কাপড় বিক্রিতে সুবিধা করতে পারছেন না। প্রতিযোগিতা ও আধুনিকতায় যারা টিকতে পারছেন না, তারা পিছিয়ে পড়ছেন।
বেড়া পৌর এলাকার সান্যালপাড়া মহল্লার রফিকুল ইসলাম তিনি জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এলাকার প্রান্তিক তাঁতি যারা মান্ধাতা আমলের তাঁত লাটাই ব্যবহার করছেন তাঁরা সময়ের সাথে তাল মেলাতে না পেরে ক্ষতির মধ্যে রয়েছেন। এ সকল তাঁতিরা নিত্য নতুন ডিজাইন তৈরি করতে সক্ষম না হওয়াতে শ্রমের মজুরি হারাচ্ছেন।অনেকে ক্ষতির মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসতে না পেরে ঋণগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছেন।
বেড়া উপজেলার মালদাপাড়া গ্রামের তাঁতি একরাম হোসেন বলেন, ‘আমাগরে গ্রাম আর পাশের পেঁচাকোলা গ্রামে বছর খানেক আগেও হাজার চারেক তাঁত চালু ছিল। এখন অর্ধেকের বেশি তাঁত বন্ধ। আমিও দীর্ঘদিন তাঁত বন্ধ রাখিছিল্যাম। ঈদ উপলক্ষে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দুটি তাঁত আধুনিকায়ন করেছি। এখান যে লুঙ্গি গুলো তৈরি হচ্ছে সে গুলোর চাহিদায় তিনি বেজায় খুশি।
তার মতে সনাতন পদ্ধতির তাঁত গুলোকে আধুনিকায়ন করতে যে পুঁজির দরকার সে পুঁজি অনেক তাঁতিদের নেই।গত দুবছরের করোনা হাজার হাজার তাঁতি পথে বসে গিয়েছে। অনেকে মহাজনের ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে বাপ দাদার পেশা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় শ্রম বিক্রি করছে।
বেড়া উপজেলা প্রাথমিক তাঁতি সমিতির সাবেক সভাপতি মোঃ শফিউল আযম "আজকের পত্রিকাকে" জানান, দীর্ঘদিন তাঁতিদের নিয়ে কাজ করেছি। এখন সময় বদলেছে মানুষের রুচির পরির্বতন হচ্ছে পরিবর্তিত সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ঐতিহ্যবাহী পাবনার তাঁত শিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সরকারী সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকার বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের মাধ্যমে তাঁতিদেরকে স্বল্প সুদের ঋনের ব্যবস্থা করলে বন্ধ হওয়া তাঁতগুলো আবার সচল হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য পাবনা জেলা তাঁতবোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জেলায় হাত লুম(খটখটি),পাওয়ার লুম(চিত্তরঞ্জন) ও আধুনিক প্রযুক্তির ৬৪ হাজার তাঁত রয়েছে। এ শিল্পের সাথে প্রায় দুই লক্ষ মানুষের জীবন জীবিকা যেমন নির্ভর রয়েছে তাঁতের সাথে তেমনি সম্ভাবনা রয়েছে সঠিক কর্মপরিকল্পনা। সরকার এ বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে যেমন আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে তেমনি বৈদেশিক মূদ্রার অর্জনের অগ্রগতি বাড়তে পারে।