গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পদুমশহর ইউনিয়নের স্কুল বাজার এলাকার কৃষক ঘুটুরাম এবার ধার-দেনা করে দুই বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছেন। তার জমির ধান পাকা শুরু করেছে। আর কিছু দিনের মধ্যেই ধান কেটে ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঘুটুরাম। কিন্তু এরইমধ্যে জমিতে দেখেন তার সমস্ত জমির ধানক্ষেত ঝলসে যাচ্ছে। সদ্য ফুলে বের হওয়া ধানের শীষ গুলো শুকিয়ে চিটা হচ্ছে। এমনটা শুধু ঘুটুরই নয়, ওই এলাকার কৃষক আসাদ, হারুন অর রশিদ, আজাদুল, আনটু, হিটলার, আসাদুল ইসলাম ও ভুট্রু সহ প্রায় ৫০ জন কৃষকের অন্তত ৮০ বিঘা জমির বোরোধান ক্ষেতের একই অবস্থা। দেখা গেলো পাশেই ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়া নির্গত হচ্ছে। সবার অভিযোগ, ইটভাটার কারনেই তাদের এ ক্ষতি।
ধান গাছের শীষ শুকিয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে। কৃষক হারুন অর রশিদ জানান, লাভের আশায় এবার সাড়ে ছয় বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করতে গিয়ে অনেক ধার-দেনা করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলানো পরিশ্রম করে আসছি। আমার জমির ধানের শীষ সবেমাত্র বের হয়েছে, এমন সময় ইট ভাটার ধোঁয়ার এই সর্বনাশ কি ভাবে সহ্য করা করা যায়। এলাকাবাসী জানান, ইট ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় শুধু ধান ক্ষেতই নষ্ট হয়নি। ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতীর গাছ, বাঁশঝাড় পুড়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে। মরে গেছে পুকুরের মাছ, শাক সবজি¦সহ মাঠের ফসল। গাছের ছোট আম,কাঠাল নষ্ট হয়ে গাছ থেকে ঝড়ে পড়া সহ প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মক হমকির মুখে পড়েছে। উপজেলা কৃষি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারগণ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পদুমশহর স্কুল বাজার এলাকায় ৭ বছর আগে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে ইট পোড়ানো শুরু করে বি এম কে-২ ব্রিক্সস নামের একটি ইট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। ইট প্রস্তুত ও ভাঁটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে কোন আবাসিক এলাকা ও ফসলী এলাকায় কৃষি জমিতে ভাঁটা স্থাপন করা যাবে না। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক এলাকায় ইটভাটা স্থাপন তো সম্ভবই নয়। কিন্তু এই ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারী কোনো নিয়মকানুনের তোয়াক্কাই করা হয়নি। এখানেই ইটভাটার পাশে রয়েছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, একটি বাজার, একটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ও ফসলী কৃষি জমির মাঠ। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে ভাঁটা স্থাপন করেছেন স্থানীয় মনির হোসেন। এ ব্যাপারে ভাঁটা মালিক মনির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে না পাওয়ায় ভাটার ম্যানেজার নিপেন্দ্র নাথ জানান, ইট প্রস্তুত ও ভাঁটা স্থাপন (নিন্ত্রণ) আইন মেনেই ইট প্রস্তÍুত করা হচ্ছে। ভাটার নির্গত ধোাঁয়ায় কৃষকের যে ক্ষতি হয়েছে, তার তালিকা করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতি পূরণ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান জানান, ভাটাটি ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। যা কোনো নিয়মের মধ্যে পড়েনা।