রাতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাল্কহেড চলাচলের কারণে প্রায়ই যাত্রীবাহী নৌযানের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এতে প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটেছে। ফলে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোর নিরাপদ চলাচলের প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাল্কহেড।
যেকারণে আসন্ন ঈদ-উল ফিতরের আগে নৌরুটে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থানে নেমেছেন বরিশাল জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করে বুধবার সকালে জেলা প্রশাসক মোঃ জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ঈদ-উল ফিতরের আগে ও পরে মোট ১০ দিন ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে বাল্কহেড চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপামি যে চ্যানেল ধরে যাত্রীবাহী নৌ-যানগুলো চলাচল করছে ওই চ্যানেলে ওই ১০দিন জেলেরা জাল ফেলতে পারবেন না। পাশাপাশি অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েও কোনো নৌ-যানকে ঘাটত্যাগ করতে দেয়া হবেনা।
জেলা প্রশাসক বলেন, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে ঈদে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও ম্যাজিষ্ট্রেটগণ মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবেন।
সূত্রমতে, টিকেট কালোবাজারিসহ মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি এবং পকেট মারদের দৌরাত্ম্য প্রতিরোধে নৌ-বন্দরে কঠোর অবস্থানে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক টিম। যাত্রীচাঁপ সামলাতে আগামী ২৭ এপ্রিল থেকে বেসরকারী লঞ্চ মালিকদের প্রতি বিশেষ সার্ভিস (স্পেশাল ট্রিপ) চালুর জন্য ওইসভায় আহবান করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, করোনার প্রকোপ কমে আসায় এ বছর ঈদ-উল ফিতরের ছুটিতে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য শহর থেকে দক্ষিণাঞ্চলে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামবে। তাই নাড়ির টানে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ করতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর আরো বাড়তি নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে নৌ-যান চলাচলকে নিরাপদ করার জন্য ঈদের আগের পাঁচদিন এবং পরের পাঁচদিন মিলিয়ে মোট ১০দিন ঢাকা-বরিশাল নৌপথে বাল্কহেড চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একইসময়ের জন্য ঢাকা-বরিশাল নৌপথের কোথাও জাল ফেলা যাবেনা। এই দুইটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন এবং নৌ-পুলিশ দায়িত্ব পালন করবেন।
বিশেষ সার্ভিস চালুর ব্যাপারে সুন্দরবন নেভিগেশনের পরিচালক ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, গার্মেন্টস ছুটি না হলে বিশেষ সার্ভিস চালু করা সম্ভব নয়।
নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব কঠোরভাবে পালন করার জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক এবং বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঈদের সময় যাত্রীচাঁপ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সেজন্য বরিশাল নৌ-বন্দরের গ্যাংওয়েগুলো মেরামত করা হচ্ছে। পাশাপাশি টার্মিনালের অভ্যন্তরে যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, নৌপথে যাত্রীবাহী লঞ্চ-স্টিমার ও জাহাজের যাত্রা নিরাপদ করতে রাতে বাল্কহেডসহ পণ্যবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। তবে রাতে বাল্কহেডসহ পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়নি। ফলে প্রায়ই এসব বাল্কহেড নৌ-দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ফতুল্লার মোড়ে অধিকাংশ সময় তিনটি ট্যাংকার নোঙর করে রাখা হয়। ফলে ওইস্থানের নৌপথ সরু হয়ে গেছে। মুন্সীগঞ্জ মোড় থেকে মোহনপুর পর্যন্ত দিনে-রাতে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল করায় লঞ্চ চালকরা ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অভিযানের পর কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও আবার নদীতে নামে বাল্কহেড। সরকারী হিসেব মতে, চার হাজার সাতশ’টি নিবন্ধিত বাল্কহেডের কথা বলা হলেও সারাদেশের নদীতে চলছে কমপক্ষে ১০ হাজারের বেশি বাল্কহেড।