পুলিশ কমিশনারের কাছে মহানগর ডিবি পুলিশের একজন এসআই এবং এএসআই’র বিরুদ্ধে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে এজাহার সাজানো ও ঘুষগ্রহণের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সাংবাদিক মাসুদ রানা। এটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই সাংবাদিক ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য।
ফলে সাংবাদিক মাসুদ রানাকে একটি মামলার মনগড়াভাবে চার্জশীটে অর্ন্তভূক্ত করে বর্তমানে বিভিন্নধরনের হয়রানী শুরু করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একইসাথে ওই সাংবাদিক পরিবারসহ তার নিজের জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। উপায়অন্তুর না পেয়ে পুলিশ হেডকোয়াটার্সে উপস্থিত হয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গভীর তদন্তের মাধ্যমে ডিবি পুলিশের হয়রানী থেকে রেহাই পেতে আইজিপির হস্তক্ষেপ কামনা করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সাংবাদিক মাসুদ রানা।
বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা শাখার তিন ডিবি পুলিশ সদস্যর বিরুদ্ধে আইজিপি’র বরাবরে অভিযোগ দায়ের করা সাংবাদিক মাসুদ রানা দৈনিক দি নিউ নেশন ও প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার বরিশাল প্রতিনিধি এবং সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির জেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যে মামলার চার্জশীটে সাংবাদিক মাসুদ রানাকে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে, সেই মামলার এজাহারভুক্ত আসামির বাহিরে অজ্ঞাত বা পলাতক কোন আসামি নেই। পাশাপাশি আসামিদের রিমান্ড কিংবা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীও নেই। ফলে বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের মামলায় কাউকে চার্জশীটে অর্ন্তভূক্ত করা ন্যায় সংগত নয়। অতিসম্প্রতি ওই মামলায় কারাভোগ করে জামিনে বের হয়েছেন সাংবাদিক মাসুদ রানা।
সূত্রমতে, নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল সংলগ্ন এলাকায় অভিযোগকারী সাংবাদিকের পরিবারের মালিকানাধীন মেসার্স জীবন মেডিকেল হল নামের একটি ফার্মেসি রয়েছে। ২০২১ সালের ৫ নভেম্বর সাংবাদিকের ছোট ভাই মাহমুদুল হাসান জীবন ফার্মেসীতে বিক্রয় কাজে নিয়োজিত ছিলেন। সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, ওইদিন বেলা ১১টা ২৩ মিনিটের সময় একজন ক্রেতা ওই দোকান থেকে ২/৩ পিছ ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানীর কৃমির ওষুধ ক্রয় করে নিয়ে যায়। এর ১৩ মিনিট পর ওই ক্রেতাসহ মহানগর ডিবি পুলিশের এসআই মসরুদ উদ্দিন নীলবর্ণের পলিথিনে মোড়ানো কিছু ওষুধ নিয়ে ওই ফার্মেসীতে প্রবেশ করে সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে নেশার ইঞ্জেকশন বিক্রি করার অভিযোগ তুলে হুমকি দিয়ে দোকানের ক্যাশ বাক্সে থাকা নগদ অর্থ তুলে নেয়। পাশাপাশি ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তা ছাড়াই তল্লশীর নামে দোকানের ওষুধপত্র এলোমেলো করতে থাকে। এ সময় বিক্রেতা মাহমুদুল হাসান জীবন ডিবি পুলিশের এ কাজের প্রতিবাদ করায় তাকেসহ সোহেল নামের ক্রেতাকেও ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।
বুধবার সকালে সাংবাদিক মাসুদ রানা বলেন, ডিবি অফিসে বসে আমার ভাই জীবনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে অভিযান টিমের সাথে থাকা ডিবির এএসআই ইছহাক হোসেন আমাকে ডিবি অফিসে দেখা করতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর নানা অজুহাত দেখিয়ে বিকেলে আমার ভাইকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে এএসআই ইছাহাক ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়। টাকা নেয়ার পরেও আমার ভাইকে না ছেড়ে ঘুমের ইজিয়াম ও ব্যাথার নেলবান ইঞ্জেকশন উদ্ধার দেখিয়ে জীবন ও ক্রেতা সোহেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
সাংবাদিক মাসুদ রানা বলেন, এ ঘটনার পর আমি ডিবির এএসআই ইছহাকের কাছে ফোন করে টাকা ফেরত চাইলে তিনি বিভিন্ন ধরনের হুমকিসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। পরে এ ঘটনায় দুই ডিবি পুলিশের প্রতারনার শিকার হয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন (বিএমপি) পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়। আবেদনকৃত অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে প্রমাণ স্বরুপ সিসি ক্যামেরার ভিডিও, অডিও রেকডিং এবং লিখিত ও মৌখিক জবানবন্দি দেয়া হয়েছে।
মাসুদ রানা অভিযোগ করেন, পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ দায়ের করায় ক্ষিপ্ত হয়ে সহকর্মীদের রক্ষা করতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফিরোজ আলমের সাথে যোগসাজস করে চার্জশীটে অনৈতিকভাবে মদদদাতা ও মামলার গতিপথ পরিবর্তনের চেষ্টার তথ্যজুড়ে তাকে (মাসুদ রানা) চার্জশীটে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ মামলার এজাহারে অজ্ঞাত, পলাতক আসামি নেই এবং এজাহারভুক্ত আসামিদের রিমান্ড কিংবা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও নেই।
ভূক্তভোগী সাংবাদিক মাসুদ রানা বলেন, আমাকেসহ ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নানাধরনের মামলার ষড়যন্ত্র ও বিভিন্ন থানার মামলায় আসামি হিসেবে নাম ঢুকিয়ে দিয়ে হয়রানী করতে পারেন বলে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম থেকে আমি জানতে পেরেছি। তাই ডিবি পুলিশের এ নাটকীয়তা থেকে রক্ষা পেতে সোমবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে পুলিশ হেডকোয়াটার্সে উপস্থিত হয়ে আইজিপির বরাবরে লিখিত আবেদন করেছি।
তবে উল্লিখিত অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগর ডিবি পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডিবি পুলিশ কাউকে হয়রানী করতে কাজ করেনা। সত্য উদ্ঘাটন করতে গেলে কারোনা কারো বিপক্ষে যাবেই। আর যাদের বিপক্ষে যাবে তারাতো ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে মনগড়া কথাই বলবে। যা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সঠিক তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা বেড়িয়ে আসবে।
এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাহাবুদ্দিন খান বলেন, আমার কাছে অভিযোগ এসেছিলো, আমি তদন্ত করতে একজনকে দায়িত্ব দিয়েছি। কোন অন্যায় কাজ হয়ে থাকলে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।