গাজীপুর জেলা বিএনপির নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন একেএম ফজলুল হক মিলন ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন শাহ্ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজ। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিন সকালে গাজীপুর মহানগরীর টেকনগপাড়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের সাগর-সৈকত কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে গণতান্ত্রিক উপায়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সভাপতি পদে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম ফজলুল হক মিলন ৭০৬ ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা বিএনপি নেতা মোতালেব হোসেন পেয়েছেন ৬২ ভোট। সভাপতি পদের ১২ ভোট বাতিল হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক পদে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আ স ম হান্নান শাহ্ পুত্র শাহ্ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজ ৫৫৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল পেয়েছেন ২০০ ভোট এবং জেলা বিএনপির সদস্য মোঃ সাখাওয়াত হোসেন সবুজ পেয়েছেন ৪ ভোট, তিনি নির্বাচনের পূর্বে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে আগেই সরে দাঁড়িয়েছিলেন। নির্বাচনে ৮টি ইউনিটে ৮০৮ জন ভোটারের মধ্যে ৭৮০ জন কাউন্সিলর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
দীর্ঘদিন পর জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। সম্মেলনকে ঘিরে উজ্জীবিত নেতা-কর্মীদের এক মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক একেএম ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল ও যুগ্ম-আহবায়ক কালিয়াকৈর পৌর মেয়র মজিবুর রহমানের যৌথ পরিচালনায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মোঃ বেনজির আহমেদ টিটু, সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর খান, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, কেন্দ্রীয় নেতা ওমর ফারুক সাফিন, গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সালাহ উদ্দিন সরকার, সদস্য সচিব মোঃ সোহরাব উদ্দিন, জেলা বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির মাষ্টার, শাহজাহান ফকির, শাহ্ রিয়াজু হান্নান রিয়াজ, ইব্রাহীম বাদশা, ভিপি হেলাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট কাজী খান, দেওয়ান মোয়াজ্জেম হোসেন, জয়নাল আবেদীন রিজভী, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান মোল্লা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাসিবুর রহমান মুন্না, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসী, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আক্তারুজ্জামান বাবুল, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মোল্লা প্রমূখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন গাজীপুর জেলা ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক কারী হাফেজ ইব্রাহীম। অনুষ্ঠানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, আরাফাত রহমান কোকো, আ স ম হান্নান শাহ্ সহ জেলা ব্যাপী ও সারাদেশে প্রয়াত বিএনপি নেতা-কর্মীদের জন্য শোক প্রস্তাব শেষে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। সম্মেলন ছিলো উৎসব মূখর এবং নেতা-কর্মীরা ছিলো ব্যাপক উজ্জীবিত।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা ডাঃ মাজহারুল আলম, মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক শওকত হোসেন সরকার, জেলা বিএনপি নেতা আবদুল মোতালেব, জিএস সুরুজ আহমেহ, ভিপি জয়নাল আবেদীন তালুকদার, সরকার জাভেদ আহমেদ সুমন, রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু, আবদুস সালাম শামীম, জেলা জিয়া পরিষদের সভাপতি ও সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুরের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন প্রমূখ।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহা সচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যারা জিয়াউর রহমানকে অস্বীকার করে তারাই স্বাধীনতাবিরোধী। আওয়ামী লীগের কথায় কথায় গুম, খুন, মামলা-হামলা সরকারের স্বভাবে পরিনত হয়েছে। আওয়ামী লীগ মুখে বলে একটা কাজ করে তার উল্টোটা। গণতন্ত্রের জন্য এদেশে সবচে বেশী অবদান বেগম খালেদা জিয়ার। খালেদা জিয়াকে ষড়যন্ত্র করে সাজা দেয়া হয়েছে যা আজ আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত। পত্রিকার পাতা খুললেই দুর্নীতি আর দুর্নীতি। উত্তরা থেকে জয়দেবপুর প্রতি কিলোমিটার রাস্তা নিমার্ণে ব্যয় হয়েছে ২১৩ কোটি টাকা। করোনার টিকা নিয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। ব্যাংকের মোটা অংকের টাকা লুট করে দেশের বাইরে নিয়ে গেছে। শেখ হাসিনার বিয়াই খন্দকার মোশারফ হোসেনের সহোদর ভাইসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা সহ গোটা বাংলাদেশ আজ দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে। আর দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে জনগনকে নিঃস্ব করছে।
তিনি আরো বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সালমান এফ রহমানের ফাঁস হওয়া ফোনালাপে সজীব ওয়াজেদ জয় ও বিচার বিভাগের কথা এসেছে। কি কথা এসেছে তদন্তের মাধ্যমে জনগনের সামনে আসুক, সেজন্য আমরা দুদকে চিঠি দিয়েছি। গাজীপুর সরকার পতনের আন্দোলনের ঘাঁটি হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, একটা ভয়াবহ গণতন্ত্র বিরোধী সরকার জনগনের মাথার ওপর চেপে বসে আছে। জনগনকে নুন্যতম গণতন্ত্র চর্চাও করতে দেয় না। দেশ ও জনগনের স্বার্থে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে দুর্ণীতিবাজ ভোটবিহীন বায়বীয় এই সরকারকে রুখতে হবে।
এর আগে তিনি জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এ সময় মাইকে জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।