আমতলী উপজেলার ১৫ স্থানে তরমুজ পরিবহণ ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাট বাজারের রশিদ বই ব্যবহার করে ট্রাক প্রতি ৩’শ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করছেন। তরমুজ মৌসুমে এ এলাকায় প্রায় কোটি টাকার চাদা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ ট্রাক চালক ও ব্যবসায়ীদের।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলা সদর, আঠারোগাছিয়া, কুকুয়া, হলদিয়া ও চাওড়া ইউনিয়নে ব্যাপক তরমুজ চাষ হয়। প্রতিবছর বাম্পার ফলন হলেও এ বছর অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারে পরাগায়ণ বাধাগ্রস্ত হয়ে তরমুজ ফলনে ব্যাপক বিপর্যয় ঘটেছে। এরপরও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তরমুজ ব্যবসায়ীরা এসে এসব এলাকা থেকে তরমুজ ক্রয় করছেন। ওই তরমুজ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানী হয়। এ তরমুজ পরিবহণে প্রতিদিন শত শত ট্রাক গাজীপুর, দক্ষিণ গাজীপুর, টেপুরা, কাঠালিয়া বাজার, সোনাখালী, উত্তর সোনাখালী, মধ্য সোনাখালী, কুকুয়া, মহিষকাটা, সুবন্ধির বাঁধ, ফকির বাড়ী, খলিয়ান, তালুকদার বাজার ও বিশ্বাসের হাটে অবস্থান করে। ওই স্থানগুলো থেকে ট্রাকে তরমুজ লোড দেয়া হয়। কিন্তু একটি প্রভাবশালী মহল হাট বাজারের রশিদ বই ব্যবহার করে ট্রাক থেকে প্রতিদিন ৩’শ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করছে। তাদের দাবীকৃত চাঁদা না দিলে ট্রাক আটকে রাখছেন এমন অভিযোগ করেন ট্রাক চালক হারুন।
গাজীপুর বন্দরের ইজারাদার খাজনা বাবদ ট্রাক প্রতি এক হাজার থেকে দের হাজার টাকা আদায় করছেন। কিন্তু ইজারাদার মোঃ ওহাব হাওলাদার অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, সরকারী নিয়ম অনুসারে খাজনা ট্রাক প্রতি ৭-৮ হাজার টাকা আদায় করতে হয় কিন্তু আমি সেই রকম আদায় করি না। দক্ষিণ গাজীপুর ব্রীজ এলাকায় মোঃ মন্টু খাঁন প্রবাহমান খালে বাঁধ দিয়ে নলুয়াবাগী, বলইবুনিয়া, পাটুয়া, কাঠালিয়া ও টেপুরা এলাকার তরমুজ আনা নেয়া করছে। তিনি বাঁধের নামে ট্রাক প্রতি ৩’শ থেকে ৫’শ টাকা আদায় করছে। এ পর্যন্ত তিনি অন্তত তিন শতাধিক ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ট্রাক চালক অভিযোগ করেন। চালক ও ব্যবসায়ীরা আরো অভিযোগ করেন, দক্ষিণ গাজীপুর এলাকায় সরকারী কোন ইজারা নেই। কিন্তু মন্টু খান প্রবাহমান খালে বাঁধ দিয়ে প্রতিদিন ৩০-৪০ খানা ট্রাক পারাপার করছে। ওই ট্রাকগুলো থেকে তিনি চাঁদা আদায় করছে। তার দাবীকৃত চাঁদা না দিলে ট্রাক আটকে রাখে বলে অভিযোগ করেন ট্রাক চালক মিরাজসহ আরো কয়েকজন। তবে মন্টু খাঁন ট্রাক আটকে রাখার কথা অস্বীকার করে বলেন, খালে বাঁধ দেয়ায় খরচ হয়েছে। ওই টাকা উঠাতে কিছু চাঁদা আদায় করছি। সুবন্দি বাজারে এবং জুলেখার বাজারে ইজারাদারের নামে রশিদ বই ব্যবহার করে দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছেন। কুকুয়া ইউনিয়নের এক ওয়ার্ড যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রাসেল মিয়া কুকুয়া-গাজীপুর সড়কের বিভিন্ন স্থানে ট্রাক প্রতি ৫’শ থেকে এক হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে। প্রতিদিন ওই সড়কে অন্তত ১৫-২০টি ট্রাক লোড হয়। তবে রাসেলের সাথে এ বিষয়ে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তা অস্বীকার করেন। বিশ্বাসের হাটে ইজারাদার একটি ট্রাক থেকে ৯ হাজার টাকা আদায় করেছেন।
ট্রাক চালক মোঃ রহিম মিয়া বলেন, পথে পথে চাঁদা দিতে হয়। টাকা না দিলে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত বেশ কয়েকজন তরমুজ ব্যবসায়ী বলেন, এক ট্রাক তরমুজ আঞ্চলিক সড়ক থেকে মহাসড়কে আনতে পথে পথে বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনকে অন্তত চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়।
এভাবেই পথে পথে তরমুজ পরিবহণ ট্রাকে চাঁদা আদায় করছেন চাঁদাবাজরা। এভাবে চাদাবাজি হলে একসময় এসব ব্যবসায়ীরা এ এলাকা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলে তরমুজ চাষীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় চাষীরা। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন চালক, ব্যবসায়ী ও তরমুজ চাষীরা।
আমতলী থানার ওসি একেএম মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এখনই খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, চাঁদা বন্ধে ভুক্তভোগীরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলে আমিও ভুমিকা রাখতে পারি কিন্তু অভিযোগ না পেল আমার কিছুই করার থাকে না।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ বলেন, এভাবে হওয়ার কথা নয়। যদি কেউ করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।