জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বসতি ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে ক্রমেই কমছে খাদ্যশস্য উৎপাদনের উপযোগী কৃষিজমির পরিমাণ। এ অবস্থায় আমাদের জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা মেটাতে হলে প্রয়োজন আধুনিক কৃষিপদ্ধতি, অধিক ফলনশীল শস্যের জাত এবং নিবিড় চাষাবাদ ব্যবস্থা। বাংলাদেশের কৃষিবিজ্ঞানীরা এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্যের পরিচয় দিয়ে চলেছেন। তাঁদের উদ্ভাবিত ধান ও অন্যান্য ফসলের উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবনের কারণে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে কিছু পরিমাণে রপ্তানিও করা যাচ্ছে। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ পৃথিবীতে এখন তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানীরা ধানের একটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে তাঁরা ধানটির নাম দিয়েছেন ‘বঙ্গবন্ধু ধান-১০০’। মাঠ পর্যায়েও এই ধানের সাফল্য অনেক বেশি দেখা গেছে। আশা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে চালের জোগান নিশ্চিত করতে ধানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ব্রির গবেষকদের মতে, বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ উচ্চ জিংকসমৃদ্ধ একটি ধান। এতে জিংকের পরিমাণ রয়েছে প্রতি কেজিতে ২৫.৭ মিলিগ্রাম, যা মানবশরীরে জিংকের অভাব পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া এই চালে অ্যামাইলোজ রয়েছে ২৬.৮ শতাংশ এবং প্রোটিন রয়েছে ৭.৮ শতাংশ। এই ধানের চাল মাঝারি চিকন ও সাদা। দেখতে অনেকটা নাজিরশাইল বা জিরা ধানের দানার মতো। চালের গুণগত মান অত্যন্ত ভালো এবং ভাত ঝরঝরে। উৎপাদনশীলতাও অনেক বেশি, হেক্টরপ্রতি ৭.৮ টনের মতো। অন্যান্য ধান উৎপাদনে যেখানে সব মিলিয়ে ১৬০ দিনের মতো সময় লাগে, সেখানে বঙ্গবন্ধু ধান উৎপাদিত হবে ১৪৫ থেকে ১৪৮ দিনের মধ্যে। ফলে বন্যাপ্রবণ এলাকায় এই ধান চাষের উপযোগিতা অনেক বেশি থাকবে। ধানটির রোগ বা বালাই প্রতিরোধক্ষমতাও বেশি। বিভিন্ন জেলায় যেসব কৃষক এরইমধ্যে এই ধান চাষ করেছেন, তাঁরাও সন্তুষ্ট। জানা যায় বাগেরহাটের গ্রামের এক কৃষক ৮০ শতক জমিতে বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ চাষ করে ৫০ মণ ধান পেয়েছেন এবং খরচ হয়েছে মাত্র ১০ হাজার টাকা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, নিকট-ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও জলবায়ু পরিবর্তনের অনেক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বা উপকূলীয় অঞ্চলে নোনা পানির অনুপ্রবেশ ক্রমেই বাড়বে। বিস্তীর্ণ অঞ্চল নোনা পানিতে তলিয়ে যাবে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি বড় অংশে খরা প্রকট রূপ ধারণ করতে পারে। সেই সঙ্গে ফসলের রোগবালাইও অনেক বৃদ্ধি পেতে পারে। ভবিষ্যতের সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের এখন থেকেই সচেষ্ট হতে হবে। বন্যা ও খরাসহিষ্ণু এবং রোগবালাই প্রতিরোধী আরো উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করতে হবে। সেই লক্ষ্যে ব্রির বিজ্ঞানীদের এই উদ্ভাবন অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমরা আশা করি, দেশের বিজ্ঞানীরা এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন এবং সরকার তাঁদের সর্বতোভাবে সহযোগিতা দিয়ে যাবে। যেভাবে কৃষি জমির পরিমাণ কমছে তাতে উচ্চফলনশীল ফসলের জাত আশীর্বাদ হতে পারে।