‘চাকরি নয় সেবা’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে নীলফামারীতে কোনো রকম ঘুষ ও তদবির ছাড়াই ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পেল ৫১ জন। শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ১ হাজার ৩২৯ জন চাকরি প্রত্যাশীকে পেছনে ফেলে তারা নিয়োগ পান। ২৩ এপ্রিল নীলফামারী পুলিশ লাইন্সে প্রাথমিকভাবে চুড়ান্ত উত্তীর্ণদের নাম প্রকাশ করেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান (বিপিএম,পিপিএম)।
জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানায়, ‘ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে আবেদনকারীর সংখ্যা ১ হাজার ৭৮৪ জন। এর মধ্যে উপস্থিত ১ হাজার ৩২৯ জন চাকরী প্রত্যাশীদের মধ্যে শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগ পান ৫১ জন। যার মধ্যে রয়েছে ৪৩ জন পুরুষ ও ৮ জন নারী। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে কৃষক পরিবারের ২৬ জন, চাকুরীজীবী পরিবারের ৮ জন, ব্যবসায়ী পরিবারের ৫ জন, অটোচালক পরিবারের ২ জন, রিক্সা-ভ্যান চালক পরিবারের ২ জন, শিক্ষক পরিবারের ২ জন, দর্জি পরিবারের ১ জন, অবসর সেনাসদস্য পরিবারের ১ জন ও দিনমজুর শ্রমিক পরিবারের ৪ জন।’
নিয়োগ পাওয়া ভ্যান চালক বাবার মেয়ে বৃষ্টি রায় বলেন, “এক সময় ভাবতাম ঘুষ ও সুপারিশ ছাড়া চাকরি হয় না। কিন্তু এবার আমার সব ধারণা পাল্টে গেছে। আমার জন্য কেউ কোন সুপারিশ করেনি। আর টাকার কথা যদি বলি, আমার বাবা ভ্যানচালিয়ে যা পায়, তা দিয়ে সংসার চালানোই দায়। টাকা দিয়ে সুযোগ কোথায় আমাদের। এ চাকরিটা হওয়ায় আমার পরিবারের খুবই উপকার হল।
মেয়ে কৃষ্ণা রায়ের পুলিশে নিয়োগ পাওয়ায় অনেক খুশি কৃষক বাবা হরেন্দ্রনাথ রায়। তিনি বলেন, ‘সব সময় চেয়েছি আমার মেয়ে কিছু করুক। আল্লাহ মেয়ে দিয়েছেন। খেয়ে না খেয়ে মেয়ের পড়াশোনা চালু রেখেছি। তবে চাকরি নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। কারণ আমার টাকা নেই। নেই বড় কোনো আত্মীয়-স্বজনও যারা চাকরি পেতে সহযোগীতা করবে। তারপরও আল্লাহর রহমতে মেধার জোরে আমার মেয়ের চাকরি হয়েছে। এজন্য আমি জেলা পুলিশ সুপারের প্রতি জ্ঞাপন প্রকাশ করছি।
নীলফামারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান (বিপিএম,পিপিএম) বলেন, ‘আমি আশাবাদী ছিলাম স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতেই পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শতভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই ৫১ জন যুবক-যুবতীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সরকারসহ পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা চাচ্ছেন পুলিশে স্বচ্ছতা ফিরে আসুক। সেই চাওয়া পূরণেই নীলফামারী পুলিশ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করছে। এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।