জহির উদ্দিনের বয়স সত্তুরের কোটায়। জন্মের পর থেকে পিতা আমির উদ্দিনের সাথে বসবাস করতেন অন্যের জমিতে। নিজের জমিজমা বলতে কিছু নেই। পিতার মৃত্যুর পর বিয়ে করে ঘর জামাই হিসেবে থাকতেন শ^শুর বাড়িতে। দিনমজুরী করে দিন এনে দিন খাওয়া। এভাবে চলছিল তার সংসার। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এক খন্ড জমির মালিক হয়েছেন। পেয়েছেন একটি পাকা ঘরও। ঈদের আগে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে জমি ও ঘর পেয়েছেন জহির উদ্দিন। তার মতো আরেক অভাগী জাহেদা বেগম (৫৪)। একযুগ আগে স্বামী আম্বার আলী মারা গেলে আরো অসহায় হয়ে পড়েন তিনি। দুই মেয়ে এক ছেলের সংসারে তিনি বড় অসহায়। ছেলে আলাদা থাকেন। মেয়ে দুটির বিয়ে দিলেও একটি মেয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে জাহেদা বেগমের সংসারে পড়েছে। নিজের জায়গাজমি বলতে কিছুই নেই। বড় মেয়ে জামাইয়ের জমিতে ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করতেন। তিনিও মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে জমি ও ঘর পেয়েছেন। দুজনের বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের উত্তর তাম্বুলপুর গ্রামে। মঙ্গলবার তাদের মত ঘর পেয়েছেন আরো ৮ জন ভূমি ও গৃহহীন পরিবার। মঙ্গলবার সকালে পীরগাছা উপজেলা পরিষদ হলরুমে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ৩য় পর্যায়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন ১০ পরিবারের মাঝে জমি, ঘর এবং জমির মালিকানা দলিল হস্তান্তর করা হয়। সারা দেশের মত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব ঘর উদ্বোধনের পর জমির মালিকানা কাগজপত্র তুলে দেন উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ মাহবুবার রহমান।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের ভক্তের বাজার সংলগ্ন এলাকায় নানা রঙে রঙ্গিন এসব ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রংপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (শিক্ষা ও আইসিটি) এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শামসুল আরেফীন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবদুল আজিজ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আলম, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরেস চন্দ্র, তাম্বুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রশিদ মুকুল, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, সাংবাদিক, সুধীজন, ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সদস্যরা।
ঘর ও জমি পেয়ে খুশি জহির উদ্দিন ও জাহেদা বেগম। তারা জানান, আমাদের কষ্টে শেষ নাই। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে জমি ও ঘর পাবো, এটা ভাবতেই চোখে পানি এসে যায়। আরো ৫০ বছর অপেক্ষা করলেও পাকা ঘর ও জমি পেতাম না। কিন্তু বর্তমানে তা আজ চোখের সামনে চিকচিক করছে। আমরা দোয়া করি প্রধানমন্ত্রী যেন যুগ যুগ বেচে থাকেন।
৩য় পর্যায়ে দুই লাখ ৫৯ হাজার ৫শ টাকা ব্যয়ে প্রতিটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সারা দেশের ৪৯২টি উপজেলার ৩২ হাজার ৯শ ৪টি আধুনিক ও মানসম্মত ঘর হস্তান্তর করা হয়। এর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে পীরগাছা উপজেলায় ২৬০টি পরিবারকে জমি ও ঘর দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে এ উপজেলার জন্য আরো ১১০টি ঘর বরাদ্দের কথা জানান উপজেলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, দ্রুত এসব ঘরের কাজ শুরু করা হবে।