রাত অনুমান পৌনে ১০ টা। সবেমাত্র মুসল্লীরা তারাবির নামাজ শেষ করে মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ আকাশে গর্জন, দমকা হাওয়ায় সাথে শিলা বৃষ্টি। শুরুতে বাতাসের গতি ছিল আকাশে উড়াল দেবার মতো। এর স্থায়ীত্ব ছিল ১/২ মিনিট। এর পরেই গতি কমে আসে, সব মিলে ঝড়ের স্থায়ীত্ব মাত্র ৫ মিনিট। কিন্তু ততক্ষণে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ১০টি গ্রাম। ঝড়ে ভেঙে পড়েছে কাঁচা পাকা ঘর। উড়ে গেছে ঘরের চালা। উপড়ে পড়েছে হাজার হাজার গাছ। ভেঙে পড়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। আর ঝড়ে ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে, গাছের ডাল পড়ে, প্রাচীরের ইট পড়ে বিভিন্নভাবে জহির, নয়ন, লতিফ, সাজুসহ আহত হয়েছেন নারী-শিশুসহ কমপক্ষে অর্ধশত মানুষ। দুই শতাধিক গবাদি পশু আহতের পাশাপাশি বেশ কিছু দিকবিদিক ছোটাছুটিতে হারিয়ে গেছে। ধান ও ভুট্টা কলার উঠতি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে উপজেলার পশ্চিম অংশের বড়আলমপুর, রায়পুর ও মদনখালি ইউনিয়নের উপর দিয়ে ঝড়টি বয়ে যায়। এতে বড়আলমপুর ইউনিয়নের শ্যামদাসের পাড়া, তাঁতারপুর, বড়আলমপুর ষোল ঘড়িয়া ও ধর্মদাসপুর, রায়পুর ইউনিয়নের চাঁনপুর, দ্বাড়িকাপাড়া ও ধুলগাড়ী, মদখালি ইউনিয়নের দক্ষিণ জাফরপাড়া, খালাশপীর জঙ্গলমারা, খালাশপীর তেলিপাড়া, ঠাকুরদাস লক্ষীপুর ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বুধবার সকালে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামগুলো পরিদর্শনে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায় ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। এ সময় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর তালিকা তৈরীর কাজ শুরু করা হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সেলিম, সাইদুর রহমান দুলাল চৌধুরী ও নূর মোহাম্মদ মনজু। বড় আলমপুর ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সেলিম বলেন, রাত ১০ টার দিকে বড় আলমপুর ইউনিয়নে আঘাত হানে ঝড়টি। ঝড়ের সঙ্গে মাঝারি আকারের শিলাও পড়েছে। ঝড়টি বড় আলমপুর ইউনিয়নের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। এতে এই ইউনিয়নের শ্যামদাসের পাড়া, তাঁতারপুর, বড়আলমপুর ষোল ঘড়িয়া ও ধর্মদাসপুর গ্রামের অর্ধশতাধিক বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। প্রায় ৩০ জনের মতো মানুষ আহত হয়।
মদনখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মনজু বলেন, ঝড়ে ২৫/৩০টি বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। ১০ জনের মতো আহত হয়েছেন। ঝড়ের তান্ডবের পর খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে অনেক পরিবার। রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান দুলাল চৌধুরী বলেন, রায়পুর ইউনিয়নের চাঁনপুর, দ্বাড়িকাপাড়া ও ধুলগাড়ী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তবে চাঁনপুর গ্রামের ১৬টি বাড়ি চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে গেছে। ওই পরিবারগুলো খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায় বলেন, ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সকাল থেকে কাজ শুরু হয়েছে। আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসার পর সুস্থ আছেন। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে।