ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলায় এলাকার আধিপত্ত বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ৩০ জন। নিহত যুবকওে নাম সিরাজুল ইসলাম। এ ঘটনায় ৫০টির মত বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার খারদিয়া গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বোয়ালমালী ও মুকসুদপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শর্টগানের ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
নিহত সিরাজুল ইসলাম খারদিয়া ঠাকুর পাড়া গ্রামের মো. ইশারত মোল্যার ছেলে। তিনি পাশের ইউনিয়নের সোনাপুর বাজারে ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতেন। তার মৃত্যুতে পরিবারের মাঝে চলছে শোকের মাতম।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে সরেজমিনে খারদিয়া গ্রামে গিয়ে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, এলাকার দলপক্ষকে কেন্দ্র করে গত এক মাসে খারদিয়া গ্রামের প্রভাবশালী বাসিন্দা যদুনন্দী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক মোল্যার সমর্থকদের সাথে ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মিয়ার সমর্থকদের একাধিক বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ রফিক ও আলমগীরকে গ্রেফতার করে পুলিশের উপর হামলা মামলায় আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠান। গত ২৮ এপ্রিল তারা উভয়ই আদালত থেকে জামিনে পেয়ে এলাকায় ফিরে আসেন। তারা জামিনে এসে আবার এলাকায় দলপক্ষ নিয়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে বেশ কয়েকদিন ধরে চরম উত্তেজনা চলছিল। চলমান উত্তেজনা মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দুই গ্রুপের শতশত লোকজন দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে সংঘর্ষে ঝাপিয়ে পড়ে। এতে আলমগীরের সমর্থক সিরাজুল ইসলাম, মারুফ মীর ও শহিদ মোল্যা মারাত্বক আহত হয়। এরমধ্যে সিরাজুল ইসলাম মারা যান। সিরাজুলের মারা যাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে রফিকের সমর্থকরা পিছু হটলে তাদের অন্তত ৫০টি বসত বাড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয় আলমীগের সমর্থকরা। লুটপাট করা হয় ঘরে থাকা টাকা পয়সা ও আসবাবপত্র। এতে হারুন শিকদার, সোহরাপ সিকদার, বকুল মোল্যা, ইরন মেম্বার, লুৎফর মিয়া, শাহিন শিকদার, আবদুল রব কাজী, নজরুল কাজী, জুয়েল কাজী, খোকন কাজী, রোকন কাজী, শহিদ খন্দকার, ওয়াহিদ কাজী ও মিরান মোল্যার বাড়িসহ অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
সংঘর্ষে সিরাজুল ইসলাম নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদপুর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সালথা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়। তাতে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে না আসায় বেশ কয়েক রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ও ক্যাদানে গ্যাস ছুড়ে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ভাঙচুরের বিষয় তিনি বলেন, সংঘর্ষটি শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি না হওয়ায় নিয়ন্ত্রণে আনতে সমস্যা হয়েছিল। কারণ একটি গ্রুপ হঠাৎ এসে অপর গ্রুপের বাড়িঘর ভাঙচুর-লুটপাট শুরু করে, পুলিশ আসলেই ভাঙচুরকারীরা পালিয়ে যায়। এভাবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা খন্ড খন্ড হয়ে বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। ভাঙচুর চলাকালে লুটকরা ফ্রিজ ও আসবাবপত্রসহ এক জনকে হাতেনাতে আটক হয়েছে। এছাড়াও হাতেনাতে লুট করা গরুসহ সংঘর্ষে জড়িত থাকায় আরও বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। ভাঙচুর চলাকালে হাতেনাতে লুট করা গরু, ফ্রিজ ও আসবাবপত্রসহ সংঘর্ষে জড়িত থাকায় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।