কুমিল্লার মুরাদনগরে ইউপি সদস্য কবির হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারি -বেসরকারি কোন প্রকার প্রকল্প ছাড়াই ড্রেনের নামে ভেকু দিয়ে রাস্তা কেটে খাল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে এলাকাবাসীর জনদূর্ভোগ চরমে পৌঁেছছে। উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের পালাসুতা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টির ব্যাপারে অভিযোগ করলেও রহস্যজনক কারণে ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশাসনের ভাবমূর্তি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পালাসুতা ফকির বাড়ি থেকে বটতলা পর্যন্ত প্রায় ৫শ’ মিটার রাস্তা ভেকু দিয়ে কেটে খালের মতো করে ড্রেইন করা হয়েছে। যার ফলে ওই এলাকার খেটে খাওয়া মানুষসহ অর্ধশতাধিক পরিবার চরম দূর্ভোগে পড়েছে। ড্রেনে পড়ে শিশুসহ কয়েকজন নারী-পুরুষ দূর্ঘটনার শিকার হয়েছে। ড্রেন করার নামে এলাকার বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে কবির হোসেন মেম্বারের বিরুদ্ধে। কোন প্রকার সময় না দিয়ে অনেকের ঘর ভেকু দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ভেকু লাগিয়ে বাউন্ডারী ওয়াল ও ঘর ভেঙ্গে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে প্রবাসীর স্ত্রী কুহিনুর বেগমের কাছ থেকে ৬০ হাজার, আবু কালামের কাছ থেকে ১০ হাজার, মবিন মিয়ার কাছ থেকে ১০ হাজার, কুলসুম বেগমের কাছ থেকে ৫ হাজার, সিরাজ মিয়ার কাছ থেকে ৭ হাজার, নুরু ভুইয়ার কাছ থেকে ১০ হাজার, জামাল মিয়ার কাছ থেকে ৪ হাজার, নুরুল ইসলামের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা নিয়েছে। তবে সখি বেগমের কাছ থেকে ১৪ হাজার ও আবদুল লতিফের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিলেও পরে ফেরত দিয়েছে। অনেক প্রবাসীর কাছে টাকা চেয়ে ফোনালাপও হয়েছে। কিছুলোক টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও অনেকেই মেম্বার ও তার লোকজনের ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন জানায়, কবির মেম্বার ভেকু দিয়ে ড্রেন করার নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফন্দি ফিকির করছে। গ্রামীন সড়কে এতবড় ভেকু দিয়ে ড্রেনের কোন প্রয়োজন ছিল না। সে রাস্তা, বাড়ি এমনকি কবরস্থানের গাছও কেটে ধ্বংস করে দিয়েছে। টাকা দিলে খাস জমি দখলেও সমস্যা নেই। টাকা না দিলে মালিকানা জায়গার উপর দিয়ে ড্রেন করা হয়। অপরিকল্পিত ভাবে ভেকু দিয়ে মাটি কাটায় পুরো এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
অসহায় রুবেল মিয়া বলেন, আমার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। না দেওয়ায় ভেকু লাগিয়ে আমার বসতঘরটি ভেঙ্গে দেয়। একই ভাবে আবদুর রহিম ও হাজী মনিরের ঘরও ভেঙ্গে ফেলে। ভেকু দিয়ে ভাঙ্গার কারণে তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে বলে জানায়।
ভিক্ষুক রাজিয়া বেগম বলেন, আমি ভিক্ষা করে খাই। কোন সময় সুযোগ না দিয়ে আমার ঘরটিও ভেকু লাগিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। মিস্ত্রি নিয়ে কোন রকম ঘরটি সরিয়েছি। কিন্তু ঘরের একপাশে ড্রেন থাকায় ঘরটি ঝুঁকিতে রয়েছে।
প্রবাসীর স্ত্রী শাহিনা বেগম বলেন, ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে বাড়ি আসি। এসে দেখি আমার নিজস্ব জায়গায় লাগানো গাছপালা নষ্ট করে বাড়ির সামনে খালের মতো করে বিশাল ড্রেন কাটা হয়েছে। সে ড্রেন পার হতে গিয়ে আমার মেয়ে রোকসানার (১২) হাত ভেঙ্গে গেছে। একই ভাবে ড্রেনে পড়ে রিপন মিয়ার ছেলে রিমু (৪) ও সোলেমান মিয়ার ছেলে রাফসানের (৫) হাত ভেঙ্গে যায়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কবির হোসেন মেম্বার তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগসমূহ অস্বীকার করে বলেন, কারো মালিকানা জায়গার উপর দিয়ে ড্রেন করা হয়নি। সার্ভেয়ার দিয়ে পরিমাপ করে রাস্তা ও ড্রেনের জন্য ১২ ফুট খাস জায়গা নেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বরাদ্দ এনে পর্যায়ক্রমে ড্রেন পাকা করা হবে।
দারোরা ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন খন্দকার বলেন, আমার জানামতে পালাসুতা গ্রামে ড্রেন করার কোন প্রকল্প দেওয়া হয়নি। কবির হোসেন মেম্বার কিভাবে এ বিশাল ড্রেনের কাজ করছে তা আমার জানা নেই।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। যদি ঘটনা সত্যি হয়, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।