প্রাকৃতির মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। প্রাণিকূলের জন্য প্রকৃতির আশীর্বাদ হয়ে আসে এ মাসটি। ফলফাদি গাছগুলো পূর্ণ হয়ে ওঠে ফলে ফলে। এমনটিই ফলমূলের বাম্পার ফলনের আবাস পিরোজপুরের নেছারাবাদে। বৈশাখ পেরিয়ে কয়েক দিন পরেই প্রাকৃতির জ্যৈষ্ঠের আগমন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সারা বছর কোনো না কোনো ফলের সমারোহ থাকলেও জ্যৈষ্ঠ মাস আসে নানা প্রজাতির রসালো ফলের সুবাস নিয়ে। এ মাসে বাজারে ফলের দোকানে, রাস্তার ধারে থরে থরে সাজানো আম, লিচু, তরমুজ, কাঁঠাল, জামরুল, ডালিম, আনারস, কালোজাম, বাঙ্গিসহ নানা মিষ্টি ফলের লোভনীয় গন্ধে মন কাড়ে সকলের। জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি সময়ে আমরা মুখিয়ে থাকি সুস্বাদু রসালো ফল খাওয়ার আমেজে। নেছারাবাদে হাট-বাজার, বিভিন্ন মহল্লায় কিংবা রাস্তার দু‘পাশে তৃপ্তির অপূর্ব আনন্দময় জ্যৈষ্ঠ মাসে বন বাদাড়েপাকা, আধাপাকা ও কাচাঁ ফলের পসরা সাজিয়ে বসে নেছারাবাদের ক্ষুদে ব্যাসায়ীরা। নেছারাবাদের চামী গ্রামের ফলাদি চাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত ৫ বছরে তার বাগানে এত আম ও লিচু হয়নি, এ বছর তাদের গাছে যে ফল ধরেছে তাতে খুবই খুশী। জ্যৈষ্ঠই পাকা আম, লিচু, কাঠাল, জামসহ নানা জাতের পুষ্টিকর ফল পাকতে শুরু করেছে। এমনই একটি ফল-মুলের এলাকা নেছারাবাদসহ পিরোজপুর জেলা। নেছারাবাদে গত দুই মাসে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় আমসহ নানা ফলের বাম্পার ফলণ হয়েছে। আমের ফলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ভাল তা গাছের ফলন দেখে বোজাযায়। দেশের রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের চাষ ভাল হলেও বরিশালের নেছারাবাদে কীটনাশক সার ছাড়াই উপজেলার ৫৮টি গ্রামে বাগান আকারে ২০৪ হেক্টর জমিতে ৩৮টি বাগান এবং পতিত জমি ও বসত বাড়ির ২৭ হেক্টর মোট ২৩১ হেক্টর জমিতে ৭১টি এলাকায় বিভিন্ন জাতের আম চাষ হ”েছ। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, নেছারাবাদে ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভায় চলতি মৌসুমে ২ হাজার ২০ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও প্রকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশী আমের ফলন হতে পারে। নেছারাবাদে বিভিন্ন জাতের আমসহ নানাবিধ ফলের আবাদ হ”েছ। ফলাদি চাষে নারী-পুরুষ প্রায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২২ হাজার মানুষের কর্মসং¯’ান হয়েছে। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সম্প্রতি বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জমিতে নতুন নতুন আম বাগান বৈরি হ”েছ। বাগান মালিক ও ব্যাবসায়ীদের অনেকে জানান, কৃষি অফিসের হিসাবের চেয়ে বর্তমানে অনেক বেশি জমিতে দেশি ও হাইব্রিড আম বাগান রয়েছে। চাষীরা বলেন, আম বাগান করে লাভবান হওয়ায় প্রতি বছর বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। আমের প্রায় কয়েকশ জাতের বাহারি নাম রয়েছে-যেমন ফজলি, হিমাসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি, গোপালভোগ, খিরসাপাত, মিশ্রিদানা, অরুনা, মল্লিকা, নিলাম্বরী,সুবর্নরেখা, কালীভোগ, ত্রিফলা, আশি^না আলফানসো,কাঁচামিঠা, বারোমাসি, তোতাপুরী, কারাবাউ, কেঊই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, সূর্যপূরী, পাহুতান, হাড়িভাঙ্গা, ছাতাপরা, গুটি, কলাবতী, লখন, আদাইরা, বোম্বাই ক্ষীরভোগ, রানীবোগ, গোলাপবাস, পানবোঁটা, লক্ষণভোগ, রাজভোগ, চন্দানী, সিঁদুরা, রূপালী, কলাবতী আমসহ প্রায় ৩০০‘শ ধরণের জাতের আম রয়েছে। ফলের বর্ণ জাতভেদে নামের পরিবর্তিত হয় এবং ¯’ানভেদে আঞ্চলিক ভাষায় বিভিন্ন নামে আমের নাম রাখা হয়। তবে মেহগনি ও চাম্বল গাছের প্রভাবে শতাধিক জাতের আম গাছ এখন বিলুপ্তপ্রায়। অন্যাদিকে ধেয়ে আসা অশনির ঘূর্ণিঝড়ে এস ফসলে ক্ষতি হতে পারে।