নীলফামারীর ডিমলায় ইউপি চেয়ারম্যান ও এক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ৫ম শ্রেণীর ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব,শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। গত ২৮ এপ্রিল নাউতরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে ওই ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে নাউতরা ইউপি চেয়ারম্যান আশিক ইমতিয়াজ মোর্শেদ মনি ও তার বড় ভাই নাউতরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহামুদুল হাসান নয়নকে আসামি করে ৩ এপ্রিল ডিমলা থানায় মামলা দায়ের করে। থানায় মামলা দায়েরের পর ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ভাই গাঁঢাকা দিয়েছে। তবে মামলা তুলে নিতে তারা বিভিন্ন হুমকি প্রদর্শণ করছে বলে জানানো হয় বাদির পক্ষ থেকে।
জানা যায়,সরকারিভাবে গত ২২ এপ্রিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ থাকলেও নাউতরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন অজুহাতে তার প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখেন। ২৮ এপ্রিল ক্লাস পরীক্ষা চলাকালীন সময় ৫ম শ্রেণির ওই ছাত্রীর পরীক্ষা রুমে যায় অধ্যক্ষ মাহামুদুল হাসান নয়ন। সেখানে গিয়ে তিনি ওই ছাত্রীর হিজাব নিয়ে কটূক্তি করেন। পরে তিনি হিজাব খোলার নামে ছাত্রীর শরীরের বিভিন্ন স্থান স্পর্শ করেন। এতে ছাত্রী কান্নায় ভেঙে পড়লে পরীক্ষা শেষে তাকে অফিস রুমে নিয়ে আসেন অধ্যক্ষ। সেখানে তিনি ছাত্রীটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন।
এ সময় সে কান্না করলে তাকে ভয়ভীতি দেখানো হয় যাতে সে বিষয়টি কাউকে না বলে। আর যদি বলে তাহলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়।
ওই ছাত্রীর বাবা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চাকরি করেন। গত ৩০ এপ্রিল তিনি বাড়িতে আসলে ছাত্রীর মা তার বাবাকে বিষয়টি খুলে বলেন।
এরপর ছাত্রীর বাবা বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ইউপি চেয়ারম্যানকে অবগত করেন। চেয়ারম্যান বিষয়টি আপস মিমাংসার নামে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। গত ২ এপ্রিল চেয়ারম্যান তার বড় ভাই অধ্যক্ষকে বাঁচাতে শুরু করেন ভিন্ন নাটক। আপস মীমাংসার সমাধান না টেনে উল্টো ছাত্রীর পরিবারকে ফাঁসাতে স্কুলে ডাকেন অভিভাবক সমাবেশ। করেন শিক্ষার্থীদের দিয়ে মিথ্যে মানববন্ধন। এতে এলাকার সচেতন মানুষ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
স্থানীয় লোকজন জানায়,১ এপ্রিল রাতে বিষয়টি নিয়ে আপস মীমাংসার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান তার কার্যালয়ে ডাকেন। কিন্তু রাত ৩টা পর্যন্ত তিনি সমস্যার সমাধান না করে টালবাহানা শুরু করেন।
আপোষের কথা বলে আবার তিনি পরের দিন সকাল ১০ টা পর্যন্ত সময় নেন। এরইমধ্যে তিনি ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ছাত্রীর পরিবারকে হুমকি দিতে থাকেন। চেয়ারম্যান ও তার বাহিনীর কারণে পরিবারটি বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
নাউতরা ইউপি চেয়ারম্যান আশিক ইমতিয়াজ মোর্শেদ মনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
জানা গেছে অধ্যক্ষ মাহামুদুল হাসান নয়ন নানান অজুহাতে প্রায় ছাত্রীদের গাঁয়ে হাত দেন।
এদিকে মামলা তুলে নিতে ২ নং আসামি চেয়ারম্যান আশিক ইমতিয়াজ মোর্শেদ মনি তার গুন্ডা ও মাস্তান বাহিনী দিয়ে বাদী ও তার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। ফলে সহজ সরল ওই ছাত্রীর পরিবার পড়েছে চরম বিপাকে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তৃক যদি ছাত্রী শ্লীলতাহানির এমন ঘটনা ঘটে তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানে কি শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে তা এলাকার অনেকের কাছে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে সকল শিক্ষক এ ধরনের কাজের সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্ঠান্তমুলক শাস্তি দিতে হবে। তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর এমন ঘটনা ঘটার সাহস কোন শিক্ষক পাবে না।
এ ব্যাপারে ডিমলা থানার ওসি জানান মামলা হয়েছে। আসামি ধরতে আমরা জোর তৎপরতা চালাচ্ছি।