যশোরের ঝিকরগাছায় ‘ফ্রি ফায়ার’ গেমে আসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে তামিম হোসেন (১৭) নামে এক কিশোর। এমন খবর বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক এবং স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা সমূহে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। আসলেই কি তাই? তার পরিবারের সদস্যরা এ নিয়ে রীতিমতো হতাশা প্রকাশ করেছেন।
গত রোববার ১৫ মে বিকালে উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের সৈয়দপাড়া গ্রামে সৌদি আরব প্রবাসী সাবুর আলীর বাড়ি উপস্থিত হয়ে দেখি - বারান্দায় ৫/৬ জন আত্মীয়স্বজন বসে আছেন। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করি, ভারসাম্যহীন তামিম হোসেন কোথায়? জানতে চাইলে তার মা মালঞ্চী বেগম (৩৭) জানান - তার দূলাভায়ের সাথে আসরের নামাজ আদায় করতে গিয়েছে। মালঞ্চী বেগমের কাছে প্রশ্ন করা হলো- আপনার ছেলে "ফ্রি ফায়ার" গেমে আসক্ত হয়ে ভারসাম্যহীন হয়ে গিয়েছে? এজন্য আপনার ছেলেকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিলেন কেনো?
এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- আমার এক আত্মীয় আল আমিন। সে এই মিথ্যা প্রপাগা-া ছড়িয়ে আমার সন্তান এবং পরিবারকে হেয় করেছে। তিনি বলেন- ঈদের পরে ৬ মে শুক্রবার নানীর বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গভীর রাতে ঘুমের ঘোরে মসজিদে নামাজ পড়তে যায়। সেখানেই সে ভয় পেয়েছিল। তারপর থেকেই সে মানসিক ভারসাম্য হারালে ডাক্তারের স্বরণাপন্ন হয়ে তার চিকিৎসা চালায়।
ছেলের মাথা খারাপ হওয়ার কারণে, সে এদিক ওদিক চলে যেতো এবং মানুষকে মারতে যেতো বলে তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হতো। এজন্য তাকে ১৪ মে শনিবার শিকলে বেঁধে রাখা ছিলো। আজ ১৫ মে রোববার সে অনেক সুস্থ এবং আসরের নামাজ আদায় করে আসলো।
একই গ্রামে বসবাসকারী তার মেয়ের জামাই ইমামুল হোসেন বলেন- অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে আমার শ্বশুর আজ সৌদি আরবে। অভাব অনটন এ রোগের আরেকটি কারণ।
তার মেয়ে লাবনী খাতুন (২০) জানান - আমার ভাই জেএসসি পাসের পর টাওরা স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর করোনার কারণে আর লেখাপড়া হয়নি। তবে সে গেমে আসক্ত হয়ে পাগল হয়নি। আমরা তাকে মনিরামপুরের হোগলাডাঙ্গার এক কবিরাজের চিকিৎসা করছি। সে এখন অনেকটা সুস্থ। দোয়া করবেন।
রোগী তামিম হোসেন রোববার আসরের নামাজ আদায় করে এসে জানালো- আমি ঈদের পরে আত্মীয়ের বাড়ীতে নামাজ পড়তে গিয়ে ভয় পেয়েছিলাম। তারপর থেকেই আমি পাগলামি শুরু করি।
সোমবার দুপুরে আল আমিন বলেন - আমার মামা (তামিম হোসেন) মোবাইলে ফ্রি ফায়ার সহ অনেক ধরনের গেম খেলতো, তবে কি কারণে তার মাথা খারাপ হইছে জানি না।
সোমবার দুপুরে যশোর মেডিকেল কলেজের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার আমিনুল ইসলাম বলেন, রোগীর হিস্ট্রি জানার পরেই বলা যাবে তামিমের মাথা কেনো খারাপ হইছে। তবে ভয়ের কারণে অথবা কোন কিছুর প্রতি আসক্ত হলে রোগী একাকিত্ব পছন্দ করে এবং অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে থাকে। রোগী তামিম হোসেন আসরের নামাজ আদায় করে এসে জানালো- আমি ঈদের পরে আত্মীয়ের বাড়ীতে নামাজ পড়তে গিয়ে ভয় পেয়েছিলাম। তারপর থেকেই আমি পাগলামি শুরু করি।