মণিরামপুরের জোঁকা কোমলপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নবির উজ্জামান অধিকাংশ সময়ই মেডিকেলের ছুটিতে থাকেন ! মাসের পর মাস কর্মস্থলে না গিয়েই শুধুই বেতন-ভাতা উত্তোলন করে ভোগ করেন। মঙ্গলবার (১৭মে) কর্মস্থল জোঁকা কোমলপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে ক্ষুদ্ধ জনতার মুখোমুখি হন তিনি। একপর্যায়ে করোজরে ক্ষমা প্রার্থনা করলে ক্ষুদ্ধ জনতা এবারের মতো মাফ করে দেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, প্রধান শিক্ষক নবির উজ্জামান বিদ্যালয়ে আসেননা মাসের পর মাস। মন চাইলে কখনো ঘুরতে যান সেখানে। এ অবস্থায় শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী এ বিদ্যালয় থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করছেন। মঙ্গলবার প্রধান শিক্ষক নবির উজ্জামান বিদ্যালয়ে পৌঁছুলে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদ, সুধীমহল ছাড়াও এলাকার অভিভাবকরা মারমুখী অবস্থান নিয়ে বিদ্যালয়ে আসেন। জানাগেছে, পরিবেশ বেগতিক দেখেই প্রধান শিক্ষক নবির উজ্জামান পরিচালনা পরিষদের কাছে এবারের মতো ক্ষমা ভিক্ষা চান। আর এতেই ক্ষুদ্ধ জনতাকে শান্ত করেন পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আবদুল গফুরসহ এলাকার সুধীজনরা।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য জামশেদ আলী, ব্যাংকার আবুল কাশেম, ব্লক সুপার ভাইজার মফিজুর রহমান, বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্য লুৎফর রহমান, শিমুল আক্তারসহ অর্ধশত ব্যক্তিবর্গ বিদ্যালয় যান প্রধান শিক্ষক নবির উজ্জামানকে কৈফিত নিতে। কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক দেখেই তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন পরিচালনা পরিষদের সদস্যবৃন্দ ছাড়াও ক্ষুদ্ধ জনতার প্রতি।
বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম থাকায় বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরাও পাঠদানে গাফিলতি করে থাকেন। ফলে সেখানে শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় এলাকার সচেতন অভিভাবকরা তাদের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের পাশ^বর্তী বিদ্যালয় গুলোতে ভর্তি করিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সভাপতি আবদুল গফুর জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং স্বেচ্ছাচারিতার ফলে ধ্বংসের পথে বিদ্যালয়টি। প্রায় পনে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল এ বিদ্যালয়ে। বর্তমানে লেখাপড়া না হওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী চলে গেছে অন্য বিদ্যালয়ে। বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে বিদ্যালয়টিতে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে প্রধান শিক্ষকের প্রতি ক্ষুদ্ধ হন এলাকার জনগন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে একজন কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, নবির উজ্জামান একদিনে এ পর্যায়ে আসেননি। তাকে রাজনৈতিক নেতারা ব্যবহার করে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক নবির উজ্জামানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। প্রধান শিক্ষক নবির উজ্জামানের বাড়ি মণিরামপুরের খানপুর গ্রামে।
প্রধান শিক্ষকের এহেন অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে জানতে চাইলে সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত এটিও (সহকারি শিক্ষা অফিসার) নাজমুল হাসান বলেন, তার এসব অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা জানান, তিনি মাসের পর মাস মেডিকেল দিয়ে চলেন। যে কারণে অনেককিছু করনীয় থাকলেও আইনগত ভাবে কিছুই করার সম্ভব হয়ে উঠে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সোহেলী ফেরদৌস জানান, মঙ্গলবারের বিষয়টি তাকে কেউ জানায়নি। তাছাড়া প্রধান শিক্ষক নবির উজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। যে বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।